বিল্লাল হোসেন, জুয়েল রানা, আল-আমিন সবাই শিশু। এদের সকলের বয়স ১২ বছরের মধ্যে। আর মেহেদী হাসান, আসলাম আলী, সোহেল রানা, সিফাত হোসেন ও আয়েশা আক্তার এরা সবাই কিশোর কিশোরী। বয়স ২০ বছরের বেশি নয়। ২০১৯ সালে এদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। শিশু তিনটির পরিবার আজো জানেন না তাদের ছেলে-মেয়েদের অপরাধ কি ? আর কিশোর-কিশোরীদের বড় কোনো কারন ছাড়াই হত্যা করা হয়েছে।
এই সব হত্যাকান্ডের মধ্যে ২/১ টি পরিবার ছাড়া অন্যরা এখনও জানেন না তাদের সন্তানদের কেন হত্যা করা হলো। পুলিশ বলছে এই সকল হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত চলছে। অনেক ঘটনার ক্লু উদ্ধার হয়েছে। হত্যাকারী সনাক্ত ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। মামলাগুলোর প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এই ৭ হত্যাকান্ড বিদায়ী ২০১৯ সালে অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। নিরাপরাধ শিশু-কিশোর হত্যায় অনেক পরিবারের অভিভাবকরা আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তারা এই সকল হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন, যেন আগামীতে এ জাতীয় হত্যাকান্ড আর না ঘটে।
বিদায়ী বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ খুন হয় শিশু বিল্লাল হোসেন (১০)। তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ফুটফুটে চেহারার শিশুটি সন্ধ্যায় বাড়ি ভেতর প্রবেশ করা কুকুর তাড়াতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। পরদিন বেলা ১২ টায় বাড়ির পাশের একটি কলার ক্ষেতে মিলেছে তার লাশ। বিল্লাল হোসেনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। শিশুটির বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, তার ছেলের কোনো শত্রু নেই, তারপরও কেন তাকে হত্যা করা হলো। আজো তিনি নিশ্চত হতে পারেননি তার ছেলের হত্যাকারি কারা। তিনি দ্রুত হত্যাকারি সনাক্তের দাবি করেছেন।
১ অক্টোবর শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র জুয়েল রানা (১২) খুন হয়। এই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একই সাদেকপুর গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে রাতুল ইসলাম (১৫) ও রিয়াজ শেখের ছেলে সাগর হোসেন (২১) কে আটক করে পুলিশ। এখনও জুয়েল রানার পরিবার নিশ্চিত নন কেন তার ছেলেকে হত্যা করা হলো। কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের একমাত্র পুত্র মাদ্রাসা ছাত্র আল-আমিন (১২) খুন হয়। ৩০ নভেম্বর নিখোঁজের তিনদিন পর তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। নিহত শিশুটির পিতা এক সংবাদ সম্মেলন করে তার ছেলের হত্যাকারি সনাক্ত ও আটকের দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেন পুলিশ এই হত্যাকান্ডটি নিয়ে রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছে।
এছাড়া জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরডাঙ্গা গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র আবির হোসাইন (১১) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা নুরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসার পাশে খুন হয়। সে ওই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতো। গত বছরের ২৩ জুলাই মাদ্রাসার পাশে তার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। আবিরকে কেন এভাবে খুন করা হলো তার পরিবার আজো জানতে পারেননি।
এ সকল হত্যাকান্ডের বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান জানান, এই ঘটনাগুলো মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লংঘন। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় প্রতিহিংসার কারনে অথবা কাউকে ক্ষতি করতে শিশুদের হত্যা করা হয়। এটা কোনো ভাবেই মানা যায় না। আমাদের সকলের উচিৎ শিশুদের প্রতি আরো খেয়াল রাখা, আরো যত্নবান হওয়া।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, ঝিনাইদহে শিশু-কিশোরসহ যে সব খুনের ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগের ক্লু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ২/১ টি বাকি থাকলেও সেগুলো তদন্ত পর্যায় রয়েছে। শিশু বিল্লাল হত্যা পিবিআই তদন্ত করছে। তিনি আশা করছেন এ সকল ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করবে পুলিশ। মামলাগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছেন দ্রুত মামলাগুলোর প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে।