পেশায় মুচি হলেও সংবাদ পত্রের ভক্ত শ্রী অনন্ত কুমার

পেশায় মুচি হলেও সংবাদ পত্রের ভক্ত শ্রী অনন্ত কুমার নামের এক ব্যাক্তি। তিনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জ বাজারের হাইস্কুল সুপার মার্কেটের সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যান্ত রোদ ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মুচির কাজে ব্যস্ত থাকেন। উপজেলার বাগমারা গ্রামের বাসিন্দা অনন্ত কুমার রোজ সকালে জীবিকার তাগিতে ছুটে আসেন ভবানীগঞ্জ বাজারে। এটিই তার পৈত্রিক পেশা। বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, ছোট পেশায় যুক্ত থাকলেও অনন্ত একজন বিদ্যানুরাগী মানুষ। সে প্রতিদিন একটি স্থানীয় ও একটি জাতীয় পত্রিকা কিনে নিয়ে নিয়মিত পড়েন। কোন দিন পত্রিকা দিতে বিলম্ব হলে তিনি হকারকে ধরে বসেন। অনন্তর আশে পাশের অন্যান্য মুচি ও স্থানীয়রা জানান, পেশাগত কারণে অনন্ত খুব গরীব হলেও সে একজন সাংস্কৃতিমনা মানুষ। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে উপজেলার কোথাও কোন সাংস্কৃতি হলে ছুটে যান অনন্ত। মঞ্চে গান গাওয়া বা নৃত্য পরিবেশন করা তার পছন্দের সকল শিল্পীকে তিনি ত্রিশ টাকা করে বকশিস প্রদান করেন। এভাবে বকশিস প্রদান করতে করতে তার পকেটের টাকা শেষ করে ফেলেন। শেষে তার বাড়ি ফেরার মত পকেটে একটি টাকাও থাকে না। নানান ভাবে আর্থিক সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত অনন্ত নিজের জীবন নিরানন্দ রেখে শিল্পী গায়ক ও দর্শকদের অনন্দ দিয়ে বেড়ান। এভাবে মুচি অনন্ত উপজেলা ও আশে পাশের এলাকায় দয়াল বাবা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। স্থানীয়দের মতে, শিল্পীদের টাকা দিয়ে উৎসাহ প্রদান করা ছাড়াও দয়াল বাবার রয়েছে আরো একটি বিশেষ গুন। তিনি নিজ গ্রাম ও আশে পাশের এলাকায় যে কেউ অসুস্থ হওয়ার খবর পেলে ছুটে তার বাড়িতে। নিজে সাধ্যমত তার সেবা যতœ করেন এবং প্রয়োজনে তাকে হাসপাতালেও নিয়ে যান দয়াল বাবা। অনেক মানবিক গুনে গুনাম্বিত দয়াল বাবা নিজে কোন খাবার কিনে একা একা খান না। তিনি তার সহকর্মী অন্যান্য মুচি ও বন্ধদের নিয়ে তিনি খাবারগুলো ভাগ করে খান। তাই বাজারের সবাই দয়াল বাবাকে ভালবাসেন। দয়াল বাবাও এই ভালবাসার মূল্য দিয়ে চলেন। সামান্য মুচির পেশায় যুক্ত থেকে এত গুন ও মানবিক হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে দয়াল বাবা শুনিয়ে দেন সাধকের বিখ্যাত সেই উক্তি জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ইশ্বর।