যাত্রা দলের সঙ্গে নায়ক রনির তেত্রিশ বছর পার

নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
সবে প্রাইমারীর গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে পদার্পন। গ্রামে এসেছে অখ্যাত এক যাত্রা দল। সে রাতে শিশু রনি ভাইয়ের হাত ধরে গেছে যাত্রাপালা দেখতে। রাতভর যাত্রা দেখে কী যেন এক আজানা মোহ পেয়ে বসে তাকে। তার পর তেত্রিশ বছর কেটে যায় কল্প জগতের আলো ছায়ার মঞ্চে মঞ্চে। নায়ক থেকে খল নায়ক আবার কখনও ভিলেন সহ শত চরিত্রে অভিনয় করে সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অর্থ বিত্ত খ্যাতি। তার পরও নেশা মিটেনি। আজো ডাক পেলে ছুটে যান যাত্রা দলে। সেখানেই কেটে যায় মাসের পর পর মাস। সম্প্রতি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদের আমন্ত্রনে পরিষদের শিশু পার্ক চত্তরে তিন রাত্রির যাত্রাপালা করতে ছুটে আসেন বাগমারা উপজেলার খাল গ্রামের প্রভাতী যাত্রা সংঘের পরিচালক আফসারুজ্জামান রনি(৫৫) । এ যাত্রা মঞ্চেই পরিচয় হয় এই নায়কের সাথে। ব্যস্ত অভিনয়ের ফাঁকে গ্রীনরুমে বসে তিনি সানশাইনকে জানান তার দীর্ঘ তেত্রিশ বছর অভিনয় জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনে শিশু রনি উজ্জীবিত হয়ে পড়েন। তারও মনে স্বপ্ন জাগে নেতা হওয়ার। সে সময় গ্রামে এক যাত্রাদল এলে রনি মিশে যান ওই দলে। এ দল থেকে সে দলে। অভিনয় আর অভিনয়। এভাবে নেতা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর রনি এক সময় হয়ে ওঠেন নায়ক রনি। এভাবে বছর ঘুরে যুগ পেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের গন্ড্রি পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক নামীদামী যাত্রাদলেও অভিনয়ের সুযোগ পান রনি। বাংলাদেশের বিখ্যাত যাত্রাদল প্রতীমা, রুপশ্রী, আনন্দ, চ্যালেঞ্জার, পদ্মা ও চৈতালী সহ ভুরি ভুরি যাত্রা দলে তিনি অভিনয় করে খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। মাঝে চলচিত্র ও মডেলিংয়েও কাজ করেন বেশ কিছুদিন। ইউটিউবে তার বেশ কিছু যাত্রা ও মডেলিং দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এত দীর্ঘ সময় যাত্রা দলে যুক্ত থেকে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি ও অনুভুতি সম্পর্কে তিনি জানান, শুধু অর্থ বিত্ত খ্যাতি ও নায়ক হওয়ার জন্য যাত্রাদলে যুক্ত হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ভাসা ভাসা স্মৃতি আমার মনে পড়ে। কী যে কষ্ট কী যে ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমি সেই চেতনাকেই ধারন করে যাত্রা দলে যুক্ত হয়েছি। আজো আমি স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে পাইনি। তবুও আশা ছাড়িনি। একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন নিয়ে নিজে একটি যাত্রাদল গড়েছি। নানান প্রতিক‚লতার মধ্যেও সে দল টিকিয়ে রেখেছি। এভাবে কাজ করে যাব যতদিন বেঁচে থাকি। বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ জানান গুণী এই যাত্রা শিল্পী সম্পর্কে জানান, বাগমারার এক নিভিৃত গ্রামে এমন এক প্রতিভাবান শিল্পীর বসবাস তা আমার জানা ছিল না। গুনী এই শিল্পীকে উপজেলা পরিষদ থেকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে। আগামী প্রজন্ম তার থেকে যেন উপকৃত হতে পারে আমরা সে চেষ্টাই করে যাব।