যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজারে স্কুলের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাাটি ইট গেঁথে দেয়াল দিয়ে লোকজনের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান। তিনি চান, সেখানে থাকা একজন মুক্তিযোদ্ধার বিল্ডিং ভেঙে স্কুলের জন্যে তাকে জমি দেওয়া হোক। আর মুক্তিযোদ্ধা জহর আলী লস্কর সেই প্রস্তাবে রাজি হননি।
বিষয়টি সুরাহার জন্যে বিল্ডিংয়ের মালিক মুক্তিযোদ্ধা জহর আলী লস্করসহ সেখানকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ‘প্রচীর’ অপসারণে যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, ৬ ফুট চওড়া ৩৫০ ফুট লম্বা রাস্তার দু’পাশে ১৯টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই রাস্তাটি বাজারের দু’পাশের প্রধান সড়কের সাথে গিয়ে মিশেছে। এবং সেটি গত ৮০-৯০ বছর ধরে লোকজন ব্যবহার করছেন।
ব্যবসায়ী আব্দুস কুদ্দুস বলেন, প্রায় দু’মাস হলো রাস্তার দু’পাশে ইট গেঁথে জনচলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। যেকারণে এখন লোকজনের সহজ যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। ঘোরাপথে অনেকেই আসতে চাইছেন না।
পাশের দোকানটা টেইলরিংয়ের, তার মালিক মোতালেব সরদার বলেন, চারদিন পর আজ দোকান খুলছি। আগে মোটামুটি লোকজন আসতো, টুকটাক কাজ হতো। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন লোকজনের আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত দুই বছর ছোট্ট এই দোকান দিয়েই আয় রোজগার করে সংসার চালাতাম। এখন অর্ডার বন্ধ প্রায়, সেকারণে মাঝেমধ্যে আসছি। খুবই কষ্টের ভেতরে রয়েছেন বলে তিনি জানান।
মুক্তিযোদ্ধা জহর আলী লস্করের একতলা বিল্ডিংটি একটি বেসরকারি ঋণকার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা ভাড়া নেয়। দু’মাস ধরে রাস্তা বন্ধ থাকায় তারা ঘর ছেড়ে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক শুকুর আলী বলেন, আমাদের অফিসে প্রতিনিয়ত লোকজন আসেন। কর্মীদের রয়েছে বেশকিছু মোটরসাইকেল। কিন্তু প্রাচীর দেওয়ার ফলে লোকজন যেমন আসতে পারেন না, তেমনি মোটরসাইকেল রাখারও ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়েই আমরা এই জায়গা ছেড়েছি।
বিল্ডিংয়ের মালিক মুক্তিযোদ্ধা জহর আলী লস্কর বলেন, বাজারে ১০ শতক জমির পরে আমার একতলা বাড়ি এবং ৮টি দোকান ভাড়া দেওয়া রয়েছে। স্কুলের জন্যে পূর্ব-পশ্চিমে বিল্ডিংয়ের অংশ ভেঙে শিক্ষকরা জমি চাইছেন। চলাচল করতে যেন না পারা যায়, সে কারণে রাস্তার উভয়পাশে তারা ইট দিয়ে গেঁথে তা আটকে দিয়েছেন।
তিনি জানান, বিষয়টির সুরাহা করতে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছি। এসি ল্যান্ড আমাদের কাগজপত্র চেয়েছিলেন, আমরা দিয়ে এসেছি।
জানতে চাইলে খাজুরা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, জমিটি স্কুলের। তাছাড়া দোকানে বসে থাকা লোকজন স্কুলের মেয়েদের টিজ করে; সেকারণে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্কুলের অবয়ব বাড়াতে জহর আলী সাহেবের কাছে আমরা জমি চেয়েছিলাম। তাকে বলেছি, ৫০ লাখ টাকা নিয়ে তিনি জমিটি আমাদের যেন দিয়ে দেন।
তিনি বলেন, রাস্তার জায়গা স্কুলের- এ সংক্রান্তে কাগজপত্র এসিল্যান্ডকে দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বন্দবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, বিষয়টি ইউএনও মহোদয়কে বলেছি। সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে মাপজোক করে যদি রাস্তার জায়গা স্কুলের না হয়, তবে সেটি ভেঙে দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার-ইউএনও তানিয়া আফরোজ এ প্রতিনিধিকে বলেন, জমির মালিকানা নিয়ে দু’পক্ষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তে এসি ল্যান্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি তদন্ত করে দু’একদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্ট পাওয়ার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সুফিয়ানের কয়েক দফা সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সুফিয়ান ফোন কল ব্যাক করে বলেন, সামনের সপ্তাহে আমরা দু’পক্ষকেই ডাকবো। সার্ভেয়ার পাঠানো হাবে জমি পরিমাপের জন্যে। তারপর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।