রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী সোহরাব মিয়াকে মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যাচেষ্টা মামলার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আসামীরা রাবি শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে তাদেরকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, আসামীরা পলাতক রয়েছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে।
গত ১৬ নভেম্বর সোহরাব মিয়াকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ২৫৪ নাম্বার রুমে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মী রাকিবুল ইসলাম (আসিফ লাক) ও হুমায়ুন কবির নাহিদ। এতে সোহরাবের মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনায় সোহরাব বাদী হয়ে রাকিবুল ইসলাম (আসিফ লাক), হুমায়ুন কবির নাহিদ ও আকিবুল ইসলাম রিফাতকে আসামী করে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন।
জানতে চাইলে মামলা তদন্তে থাকা মতিহার থানার পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল মোত্তালিব সরকার বলেন, দুই জন পলাতক রয়েছে। সোহরাবকে মারধরে ব্যবহৃত পাইপ ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। একজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছে। বাকি দুই আসামীকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। খুব দ্রæতই বাকিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এর আগে ১৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাকিবুল ইসলাম (আসিফ লাক) ও হুমায়ুন কবির নাহিদসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী সোহরাবসহ চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে হলের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁরা সোহরাবকে কয়েক দিন আগের একটি ল্যাপটপ চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা সোহরাবকে মারধর করেন। এতে সোহরাব বাঁ হাত ও মাথায় আঘাত পান এবং তাঁর মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হয়। মারধরে তিনি পায়েও আঘাত পান। এ ঘটনার পর সোহরাবের বন্ধুরা তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যান। পরে তাঁকে রামেক হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সোহরাব চিকিৎসা শেষে হলে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
সোহরাবকে মারধরের প্রতিবাদে ঘটনার পরদিন শনিবার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন রাবি শিক্ষার্থীরা। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকে গিয়ে বেলা এগারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ^াস দিলে সেদিনের মতো আন্দোলন স্থগিত করা হয়। পর দিন রোববার বই হাতে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে রাবি শিক্ষার্থীরা। পরে মারধরকারী দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান। পরদিন সোমবার বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এম এ বারী সাক্ষরিত এক চিঠিতে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।
এ ঘটনায় শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষক ওমর ফারুককে কমিটির আহŸায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার হল প্রশাসন বহন করবে বলে জানানো হয়। এছাড়া অভিযুক্ত দুইজনের আবাসিকতা বাতিল করা হয়। রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্রলীগের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত কলা অনুষদ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির নাহিদের পদ স্থগিত ও এবং নাহিদ ও ছাত্রলীগ কর্মী রাকিবুল হাসানকে (আসিফ লাক) সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় রাবি শাখা ছাত্রলীগ।
এদিকে এই ঘটনা তদন্তে ব্যবসায় অনুষদের ডিন হুমায়ুন কবীরকে আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জুলকার নায়েন বলেন, আমরা ওই তদন্তের কাজ শুরু করেছিলাম। বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। মাঝে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে বাসায় চলে যাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মাঝে সমাবর্তন থাকায় তদন্তে একটি বিরতি ছিল। এখন আবার কার্যক্রম শুরু করা হবে।