কমলগঞ্জে ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আশ্রয়ন প্রকল্প-২ “যার জমি আছে, ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ” কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্ণীতি‘র অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতির এমন চিত্র সরেজমিন পরিদর্শণকালে জানা গেছে- ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নের পাল গাঁও গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর শুধুমাত্র কাগজে-কলমে পেয়েছেন বিনোদ বিহারীর পুত্র কৃঞ্চ দেব নাথ। কিন্তু ঘর পেয়ে খুশি হতে পারেননি–। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিককে জানান- এ জমির মালিক ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুত্তালিব তরফদার। আমরা এখানে পাহারাদার মাত্র। বাংলাদেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবেনা, প্রধানমন্ত্রীর এমন অঙ্গীকারে সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিতকরন কর্মসূচির আওতায় আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন- এসব কিছু জানিনা। তবে, চেয়ারম্যান সাহেব আমার স্বাক্ষর ও ছবি নিয়েছেন। বাকিটা তিনি ভাল বলতে পারবেন। ঘরটি চেয়ারম্যান সাহেব তার নিজ দায়িত্বে তালাবন্ধ করে রেখেছেন। তবে, এ জমি, কিংবা ঘর আমাদের না। একটি নির্ভর যোগ্য সুত্রে প্রকাশ- ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুত্তালিব তরফদার বিক্রয় কবালা মূল্যে (পাল গাাঁও মৌজার জেএল নং- ৩৫, খতিয়ান নং- ১২১, দাগ নং- ৬৭ ও ৬৮ দাগে) (দলিল নং- ১২৯৯/২০০১) ৫৮ শতক ভূমি বিনোদ বিহারীর পুত্র কৃঞ্চ দেব নাথ ও কানু দেব নাথ এর মাধ্যমে ক্রয় সুত্রে মালিক প্রাপ্ত হন। এবং সেখানে তিনি বসত ঘর নির্মাণ করেন। অপরদিকে, একই ভূমির একই এসএ রেকর্ডীয় মালিককে ভূমির মালিক সাজিয়ে কৃঞ্চ দেব নাথ এর স্বাক্ষর ও ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আশ্রয়ন প্রকল্প-২ ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ প্রকল্পে ঘর নির্মাণ করেন। প্রকল্পে যেমন সীমাহীন দুর্ণীতি রয়েছে, তেমনি কাজের মান নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে- উপজেলায় মোট ৫১০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। দরিদ্র এসব মানুষের ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে পরিবহন খরচও নেয়ার অভিযোগ উঠেছে । আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে সরকার প্রতিটি কাঁচা ঘর নির্মাণের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঘর নির্মাণ শেষে বাড়তি টাকা সুবিধাভোগীদের ফেরত দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি এ টাকা। প্রকল্প থেকে লুটপাটের জন্য ঘর নির্মাণে প¬্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগত মান বজায় রাখা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, বরাদ্দকৃত অর্থের সম্প‚র্ন টাকা ব্যয় করা হয়নি। তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সম্প‚র্ন টাকা ব্যায়ে যদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হত, তাহলে অসহায় দুস্থ ও পুণর্বাসিত ব্যক্তিদের স্বপ্ন শতভাগ প‚রণ হত। উপকারভোগিরা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বিনাম‚ল্যে পাওয়া ঘরের মেঝেতে মাটি ভরাট করতে বাধ্য করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে জড়িতরা। এজন্য ধার-দেনা করে গুনতে হয়েছে হাজার হাজারা টাকা। মাথাগোজার একমাত্র গৃহটি যাতে সুন্দর হয় সে জন্য কর্তব্যরত কর্তাদের কথামত ঘর নির্মাণকারী শ্রমিকদের নিয়মিত ২ বেলা এমনকি কখনও কখনও ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়েছে উপার্জনে অক্ষম পরিবারদের। পিলারে নন-গ্রেড রড ব্যবহার করা হয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ইটের খোয়া (ডাস্টসহ) দিয়ে পিলার বানানো হয়েছে। পিলার ঢালাই শেষে চটের মাধ্যমে ১৪ থেকে ২১ দিন পানি দেয়ার (কিউরিং) কথা। কিন্তু সেখানে চটের বস্তা ব্যবহার করা হয়নি, দেয়া হয়নি ঠিকমত পানিও। প্রতি ফুটে একটি করে রিং দেয়ার কথা থাকলেও ১৬ ইঞ্চি পর পর লাগানো হয়েছে রিং। নীতিমালা অনুযায়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ পিআইসির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে নীতিমালা অনুযায়ী পিআইসির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সংশি¬স্ট চেয়ারম্যানরা পদাধিকার বলে কমিটির সদস্য। পিআইসির অন্য সদস্যরা হলেন- উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কমর্কতা (পিআইও), সদস্য সচবি (উপজেলা প্রকৌশলী), উপজলো সহকারী কমিশনার (ভ‚মি)। এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন র্কমর্কতা (পিআইও) বক্তব্য জানতে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনেনি। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক জানান- উপজেলায় মোট ৫১০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্ণীতির কোন সুযোগ নাই। কোন প্রকার অনিয়ম হলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।