ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় ১২ কোটি ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ছয় মাসের মধ্যেই ধসে পড়েছে। ২০১৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া এই সড়ক এ বছরের জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এর ছয় মাস পার না হতেই গত সপ্তাহে সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে কার্পেটিং সহ বেশিরভাগ জায়গা ধসে পড়ে। এতে ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা সহ দুই চাকার কিছু গাড়ি চলাচল করছে। এছাড়া সড়কের আরো কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কের এসব অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানিয়েছে, ঠিকাদারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি পুনরায় মেরামত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা প্রকৌশল অফিস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার পার ফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী গ্রাম পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটি পায় রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। কিন্তু তিনি কাজটি নিজে না করে বিক্রি করে দেন পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজটি শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেন। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই কাজ শুরু করেন। এসময় ঠিকাদারের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস কাজটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। এরপর এ বছর জুন মাসে সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। সেসময় ঠিকাদার দায়সারাভাবে ওই স্থানগুলো সংস্কার করেন।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৬ কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের ভেতরের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। খালের ভেতরের সড়ক নির্মাণের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর সামান্য কিছু মাটিও ব্যবহার করা হয়। সড়কের ধসে পড়া ঠেকাতে খালের নিচে থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত আরসিসি ব্লক দেয়া হয়েছে। এসব ব্লক বসানো হয়েছে এলোমেলো ও দায়সারাভাবে। ফলে বৃষ্টিতে ব্লকের জোড়ার স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সড়কের ভেতরের বালু ধুয়ে যেতে থাকে। এছাড়া ব্লকের মূল ভিত্তিতে খালের মধ্য গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও পানি প্রবাহের কারণে অনেক স্থানেই তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আর কিছু জায়গায় গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও শুরু থেকেই তা হেলে পড়েছিল। এ অবস্থায় গাইডওয়াল ও ব্লক সহ সড়ক ধসে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ সড়ক নির্মাণে ব্লক ও গাইডওয়াল নির্মাণে অনিয়মের কারণেই সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে।
দেওভোগ গ্রামের স্কুল শিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ করা যায়। নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এলে প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু কাজের মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে কিছুদিন যেতেই সড়ক ভেঙ্গে গেছে।
বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সড়ক ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ায় আমরা খুবই হতাশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দেখি উনারা কি করেন।
সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সদ্য বিদায়ী উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজের মান খুব ভাল ছিল। কিন্তু এবছর বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এতে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের পর্যাপ্ত টাকা সিকিউরিটি হিসেবে অফিসে কাছে জমা আছে। তার নিজ দায়িত্বেই পুনরায় সড়ক মেরামত করে দিতে হবে।