নাটোর প্রতিনিধি
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর আরিফুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো, চাঁদাবাজী সহ ২৯টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যুবলীগ নেতা ও অপর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরজু শেখ।
রবিবার দুপুরে শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকার নিজ বাস ভবনে সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবলীগের অর্থ বিষয় সম্পাদক ও নাটোর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরজু শেখ অভিযোগ করেন, ১৫ নভেম্বর জলকল দিঘীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা ও কাউন্সিলর মাসুম তার ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারপিট করে এবং গুলি করতে উদ্যত হয়। রক্ষা করতে গেলে আরজুর সহযোগী শাওনকেও মারপিট করে চোখ নষ্ট করে দেয় মাসুমের সহযোগীরা।
সংবাদ সম্মলেনে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন আরজু শেখ। এ সময় মাসুমের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের জোর দাবী জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর আরজু শেখ প্যানেল মেয়র আরিফুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, অবৈধ গর্ভপাত ঘটানো, চাঁদাবাজী সহ যে ২৯টি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো হচ্ছে ১৯৯৬সালে কান্দিভিটুয়ার রবি চক্রবর্তীর জায়গা দখল করে জোর পূর্বক রেজিষ্ট্রি করে নেয়া, পরবর্তীতে সে জায়গা ডা. আবুল কালাম আজাদের নিকট বিক্রি করে দেয়। ১৯৯৭সালের দিকে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সাথে গ্রুপিং এর কারনে তৎকালীন যুবলীগ নেতা বাচ্চু কে মেরে রক্তাক্ত করে। ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেমাঙ্গানী ব্রীজের পাশে ও বাজারে প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে প্রায় শত রাউন্ড গুলি ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃস্টি করে।
১৯৯৯ সালে শহরের ফৌজদারী পাড়ায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ভূপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাসায় হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ১৯৯৯/২০০০ সালে নাটোর বাস মিনিবাস মালিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা মঞ্জুরুল আলম হাসুর মেয়েকে জোর পূর্বক অপহরন করে, পরবর্তীতে হরিশপুর থেকে উক্ত মেয়ে ও অস্ত্র সহ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
২০১২সালে যুবলীগ কর্মী পলাশকে আহত করার পর পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ২০০০রাউন্ড গুলি ও অস্ত্র উদ্ধার করে। ২০১২সালে মাসুমের নির্দেশে তার ছোট ভাই সবুজের নেতৃত্বে শহরের নিবাবাজার চাউল পট্টিতে প্রকাশ্যে দিবালোকে যুবলীগ কর্মী শামীম হোসেন কে গুলি করে আহত করে। ২০১৩সালে আর.কে জুয়েলার্সের মালিক রাম/নিখিল কর্মকারের নিকট জোরপূর্বক ১০/১২লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে।নিচাবাজারের কুন্ডু সাহা ষ্টোরের মালিক কৃষ্ণকুন্ডু ও শিবু সাহার নিকট হতে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেছে, এখন তারা প্রায় নি:স্ব। ২০১০সালে হাসপাতাল রোড নিচাবাজারের জয়কালি স্টোরের উত্তম কুন্ডুর নির্মানার্ধীন বাসা দখল করে প্রায় ৩লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে। ২০০৯-১০ সালে নিচাবাজারের বিশিষ্ট ধান-চাউল ব্যবসায়ী নেন্টু সাহার নিকট হতে জোর পূর্বক প্রায় ২লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। ২০১২-১৩সালে নিচাবাজারের বিশিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী অনিল সাহার নিকট হতে জোর পূর্বক ১লাখ টাকা নেয় মাসুম।
২০১৬সালে স্বপন সাহার নিচাবাজার তার দোকানে মাসুমের নির্দেশে তার ভাই সুমন তালা মোড়ে ৫০হাজার টাকা আদায় করে। শহরের বড়গাছা মহল্লার আরিফুল ইসলামের মোটরসাইকেল ষ্ট্যাম্প এ জোর পূর্বক স্বাক্ষর করে নেয়। ২০১৮সালে শহরের লালবাজারে শ্রী কৃষ্ণ জুয়েলার্সের মালিক নিচাবাজারে বাড়ী তৈরীর সময় কাজ বন্ধ করে জোর পূর্বক ৭/৮লাখ টাকা চাঁদা নেয়। ২০১৯সালের মৃধা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের পরিচালক ও ব্যাংক কর্মকর্তা সবুজের নিকট হতে ৮লাখ টাকা চাঁদা নেয়। সিসিলি চাইনিজ রেষ্টুরেন্টের মালিক মাসুমের নিকট হতে ফৌজদারীপাড়া মহল্লায় ৫/৭ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। মাসুমের বাড়ির পাশে সরকারী ক্যানেল দখল করে বাড়ি নির্মান, অফিস ও গাড়ী রাখার গ্যারেজ নির্মাণ করেছে। সম্প্রতি ফৌজদারীপাড়া পুকুর সংলগ্ন বাড়ি নির্মাণ করার সময় নলডাঙ্গা কলেজের শিক্ষক জোয়াদারের নিকট চাঁদা নিয়েছে। ফৌজদারী পাড়ার ডা. সুকদেব এর নিকট হতে চাঁদা আদায় করে। ফৌজদারীপাড়ার মুন্নার বাড়ি দখল করে নিয়েছে মাসুম, তার ভয়ে মুন্না এলাকা ছেড়ে রাজশাহীতে অবস্থান করছে। নিচাবাজার ব্যবসায়ী সঞ্চয় সমিতির নামে ৫শতাধিক দোকান থেকে ৫০টাকা করে জোর পূর্বক আদায় করে।
স্বপন, সালমান, সবুজ, আদনান, টাল আজাদ, আকাশ, মাদক সম্রাঞ্জী পারভিন, হৃদয়, টাল ফিরোজ সহ অনেক কে টাকা দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনের ব্যবসা করায়। সালমান, পারভিন, হৃদয় ইতিপূর্বে মাদক সহ র্যাবের নিকট আটক হয়েছে। নাটোর েেপৗরসভার কাউন্সিলর হওয়ার ইতিপূর্বে বিভিন্ন মেয়রদের জিম্মি করে জোর পূর্বক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কাউন্সিলর মাসুম। বর্তমান মেয়র উমা চৌধুরি জলির নিকট অতিরিক্ত ৫০হাজার টাকা দাবী করলে মেয়র তার এই দাবী অগ্রাহ্য করলে তার সাথে প্রতিনিয়ত অশালীন আচরন করে মাসুম। নাটোর েেপৗরসভার ২নং ওর্য়াড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেনকে প্রকাশ্যে অফিস চলাকালিন সময়ে তার নির্দেশে স্বপন সহ তার ক্যাডাররা লাঞ্চিত করে, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ডলারের সাথে অশোভন আচরন করে। তার কোন দৃশ্যমান কোন ব্যবসা না থাকা সত্বেও অঢেল সম্পদের মালিক, বনপাড়া মহিষভাঙ্গা রোড়ে প্রাসাদ সম বাড়ি, ৪-৫টি গাড়ী ও ৫-৭টি মোটরসাইকেল রয়েছে তার। কিছুদিন পূর্বে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাচ্চুকে আটক করে ৫০হাজার টাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। ২০১০সালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মরহুম মিজান মাস্টার তার বিরুদ্ধে ভোট করায় তাকে ধরে ফৌজদারী পাড়ার মনির ডাক্তারের গোডাউনের আটকিয়ে বিবস্ত্র করে মারধার করে ও টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
২০১৮সালে আলাইপুর মহল্লায় মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত রাব্বিকে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করে। এছাড়া পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফাকে মারপিট করে। এছাড়া নৃত্য শিল্পী একাকে প্রতারনামুলক ভাবে মাসুম বিয়ে করে এবং সংসার চলাকালীন সময়ে একার পেটে মাসুমের বাচ্চা হয়। যে বাচ্চাকে হত্যা করার জন্য মাসুম ভারতে নিয়ে যায় একাকে। সেখানে একার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাসুম জোর পূর্বক গর্ভপাত ঘটায়।
তবে এসব অভিযোগে মিথ্যা-বানোয়াট দাবী করে আরিফুল ইসলাম মাসুম বলেন, এই অভিযোগগুলোর কোন ভিত্তি নেই। আমার জনপ্রিয়তা নস্ট করার জন্য আরজু মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছে। তাছাড়া কারো কাছে চাঁদাবাজি বা কারো বাড়ি দখল করার অভিযোগ সঠিক নয়।