সিলেটের বিশ্বনাথে বিদ্যালয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন লিমা বেগম (৩৪) নামের স্বামী পরিত্যক্তা এক নারী। তিনি উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের ইলামেরাগাঁও গ্রামের মৃত ছমরু মিয়া মেয়ে। স্থানীয় ইলামেরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে তিনি সংসার পরিচালনার পাশাপাশি একমাত্র মেয়ের পড়ালেখার খরচও চালিয়ে যাচ্ছেন।জানা যায়, প্রায় পনের বছর পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার উপজেলার বাসিন্দা দুদু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় বিশ্বনাথের লিমা বেগমের। বিয়ের বছরখানেক পর তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। মেয়ের জন্মের দুই মাস পরই দুদু মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় লিমা বেগমের। ফলে একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে নিজ পিত্রালয়ে চলে আসেন লিমা। কিন্ত পিতার দরিদ্র পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এই যখন অবস্থা, তখন লিমা ও তার সন্তানের ভরণ পোষন চালিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়ে পিতার পরিবারের পক্ষে। তাই গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন লিমা। এলাকার বৃত্তবান লোকদের সহায়তায় পিতার বাড়িতে একটি ছোট ঘন তৈরী করে সেখানে মেয়ে ইমা বেগমকে নিয়ে তিনি দিন যাপন শুরু করেন তিনি। ইমা স্থানীয় ইলামেরগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে। প্রায় ৭ বছর থেকে ওই বিদ্যালয়েই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝালমুড়ি বিক্রয় করে আসছেন লিমা বেগম। সংসার ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যেতে বিভিন্ন বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করার পাশাপাশি তিনি বিদ্যালয়ে ঝালমুড়ি বিক্রয় করেন।লিমা বেগম জানান, দুই থেকে তিনশত টাকা পুঁজি দিয়ে প্রতিদিন ঝালমুড়ি, চানাচুর, আচার বাজার থেকে ক্রয় করে এনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বসে তা শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেন। এতে প্রতিদিন গড়ে তার প্রায় একশত টাকা আয় হয়। ঝালমুড়ি বিক্রির পাশাপাশি তিনি সকাল ও বিকেলে এবং বিদ্যালয় বন্ধের দিন গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেন। এতে তিনি যা উপার্যন করেন তাতেই কোনমতে মা-মেয়ের সংসার চলছে।লিমা বেগম বলেন- জন্মের পর থেকে আমার মেয়ে ইমা’র খোঁজখবর নেয়নি তার বাবা। ইমাকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি। সে পড়ালেখা করে একদিন অনেক বড় হবে। অসুস্থ শরীর নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজকর্ম করে যে টাকা পাই, তাতে মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানু দূরের কথা দু’বেলা পেট ভরে খাবারই খেতে পারি না। তাই বিভিন্ন বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করার পাশাপাশি স্কুলে ঝালমুড়ি বিক্রি করি। আমার পূঁজি না থাকায় অল্প টাকা দিয়েই ঝালমুড়ি ক্রয় করে তা বিক্রি করি। এতে সামান্য টাকা উপার্যন হয়।