রামিম হাসান,ঝিনাইদহ:
অপরাধী একজন কিন্তু সাজা পেল আরেকজন। এ যেন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে অবস্থা। ঢাকার একটি কোম্পানীর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত কোম্পানীর দায়েরকৃত ৪টি চেক জালিয়াতির ১ কোটি টাকার মামলায় মো: শাহিদুল আরেফিন ওয়ারেন্টের আসামী হিসাবে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ৪টি চেকের ১টিতে আদালতের রায় হয়েছে। যেখানে তাকে ২ মাসের কারাদন্ড ও ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখনো ঘাড়ের উপর ঝুলছে আরো ৩টি মামলার রায়। কয়েকদিনের মধ্যেই হবে বাকী ৩টি মামলার রায় । অথচ যেসব চেকের বিপরীতে এসমস্ত মামলা সেই চেকের মালিক মো: শাহিদুল আরেফিনের ভাই মো: শামছুল আরেফিন। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে অবস্থার দুই ভায়ের এ কাহিনী ঝিনাইদহের শৈলকুপার ।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ঢাকার আম্বার কটন মিলস্ লিমিটেড যার হেড অফিস ৭৪ বীর উত্তম এ.কে খন্দকার সড়ক, মহাখালী, ঢাকাতে । এই কোম্পানীর সাথে চেকে লেনদেন সংক্রান্ত ঘটনায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড( লোকাল অফিস-১ দিলকূশা বা/এ ) এর ১১৭১০১৯৩৩৪ নং সঞ্চয়ী হিসাবের মাধ্যমে মো: শাহিদুল আরেফিন ২০০৮ সালের ১৫মার্চ ৪৫৩৬৩২৪ নং চেকে ৩০লাখ টাকা, ২০০৯ সালের ৩০মার্চ ৪৫৩৬৩২৫ নং চেকে ৩০লাখ টাকা, ২০০৯ সালের ১৫ এপ্রিলে ৪৫৩৬৩২৬ নং চেকে ২৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ২০০৯ সালের ১৫ মে ৪৫৩৬৩২৮ নং চেকে ১৩ লাখ ২০হাজার টাকা প্রদান করেন । কিন্তু কোম্পানীর একাউন্ট পূবালী ব্যাংক লিমিটেডে চেকগুলি কালেকশনের জন্যে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অফিসে উপস্থাপন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তা ডিস্অনার করে। এ ঘটনায় আম্বার কটন মিলস্ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়ে মো: শাহিদুল আরেফিনের নাম দিয়ে ঢাকার উত্তরা ঠিকানাতে লিগাল নোটিশ ও চিঠি দেয়।
এরপর ঐ চেকের বিপরীতে চেক ডিস্অনার, প্রতারণা ও বিশ^াস ভঙ্গের ৪টি মামলা দায়ের করে কোম্পানীটি। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত এসব মামলার মধ্যে ১টিতে (দায়রা- ৪৮৫২/০৯,সিআর-৩১৮০/০৯) চলতি ২০১৯ সালের ৪ আগষ্ট একটি রায়ে আসামী মো: শাহিদুল আরেফিন কে ২মাসের কারাদন্ড ও ৩০লাখ টাকা জরিমানা করে।
অন্যান্য ৩টি মামলাও শেষ পর্যায়ে যুক্তি-তর্কের অপেক্ষায় রয়েছে। মহানগর দ্বিতীয় যুগ্ম দায়রা জজ আদলতের মামলায়(দায়রা নং৪৮৬৫/০৯, সিআর৩৬৭৭/০৯) যুক্তিতর্ক চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর, মহানগর প্রথম যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে(দায়রা- ২৫৩১/১০,সিআর-১৮৯/০৯) মামলায় যুক্তিতর্ক-চলতি বছরের ১৪নভেম্বর এবং সিএমএম কোর্ট-৩৫(সিআর-৩৮৭৩/০৯)যুক্তিতক চলতি বছরের ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে আম্বার কটন মিলস্ লিমিটেড নামের কোম্পানী টি ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের যে সঞ্চয়ী হিসাবের( সঞ্চয়ী হিসাব নং ১১৭১০১৯৩৩৪) বিপরীতে চেকের মালিক হিসাবে মো: শাহিদুল আরেফিনের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা করছে, আদোতে সেই একাউন্টের মালিক মো: শাহিদুল আরেফিন নয়। মামলায় দায়েরকৃত ঐ একাউন্টের মালিকের নাম মো: শামছুল আরেফিন। আর ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী মো: শামছুল আরেফিনের ঠিকানা: পিতা মো: মাহাবুবুল ইসলাম, মাতা: সালেহা খাতুন, বাসা নং ১৭, ফ্লাট নং২/এ, রাস্তা নং-১, সেক্টর-৬, ডাকঘর-উত্তরা,১২৩০, উত্তরা, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ।
ঢাকায় উত্তরার ঠিকানায় তার কোন বাড়ি নেই, মামলা গুলোর উকিল নোটিশ উত্তরার ঠিকানায় গেছে, এক্ষেত্রে তিনি কিছুই অবগত নন।
শাহিদুল আরেফিন জানান তিনি, ১৯৯৮ সাল থেকে শৈলকুপার শেখপাড়া দু:খী মাহমুদ ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতা করে আসছেন। কখনো কোন কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন না বা আম্বার কটন মিলস লিমিটেডে তার কোন লেনদেন কখনো ছিল না। তাছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকে তার কখনো কোন একাউন্ট নেই, বিশেষ করে ১১৭১০১৯৩৩৪ সঞ্চয়ী হিসাব তার নয়। এসংক্রান্ত কোন মামলা বা নোটিশ সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শাহিদুল আরেফিন জানান, তার বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাজারপাড়া, তার পিতার নাম মাহবুবুল ইসলাম । তিনি জানান, দীর্ঘ বছর পওে হঠাৎ তার নামে ওয়ারেন্ট দেখে বিস্মিত হন এবং প্রতিকার চান।