রাশেদ রাজন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) হল প্রশাসন সিট বণ্টনের দায়িত্বে থাকলেও
নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ছাত্রলীগ। হলে সিট পাওয়ার একমাত্র উপায় বলতে
ছাত্রলীগকেই বুঝায়। প্রশাসনকে এড়িয়ে শিক্ষার্থী তোলা, ইচ্ছেমতো বের করে
দেওয়া, বরাদ্দকৃত সিট জোরপূর্বক দখলের মতো অনিয়মই এখানে নিয়ম হয়ে উঠেছে। এর
কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল। সম্প্রতি নতুন এই হলেও
ছাত্রলীগের ব্লক গড়ে উঠেছে। প্রশাসন কাউকে সিট বরাদ্দ দিলে তা ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীরা দখল করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক শিক্ষার্থীকে নিয়ম অনুযায়ী মেধার ভিত্তিতে সিট
বরাদ্দ দিয়েছে হল প্রশাসন। কিন্তু বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতেই হাজির
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন।
এছাড়াও অভিযোগ আছে যে, সাব্বির হল প্রশাসনকে তোয়াক্কাই করছেন না। সিটে কাকে
উঠাবেন না উঠাবেন সেটা তার মর্জির উপর নির্ভর করে। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও সে হলে সিট করে দিচ্ছেন। হলের কর্মচারী
নিয়োগের ব্যাপারেও তার হস্তক্ষেপ থাকে।
অথচ তার পড়াশোনা শেষ হওয়ার ১৫ দিন পার হয়ে গেছে। প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী পড়াশোনা শেষ হওয়ার ১৫ দিন পর আর হল ছাড়তে হয়।
এসবের ভুক্তভোগী আইতুল্লা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি হলে উঠেছিলাম।
প্রশাসনই আমাকে উঠিয়েছে। তারপর একটু ঝামেলা হয়েছে। আমি এখন মেসে আছি। এসব
ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এরকম ঘটনা এখানে স্বাভাবিক হয়ে
গেছে।। ছাত্রলীগ তো প্রতি হলেই ব্লক গড়ে তুলেছে। ছাত্রলীগের মাধ্যম হয়েই
এখন হলে উঠতে হচ্ছে। হল প্রশাসনও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আমরা চাই যাতে এই
মতিহার হল টা অন্তত সঠিক ভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ পাক।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির বলেন, আবাসিক কোন
শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়নি। আর যাকে বের করে দেয়ার অভিযোগ
ওঠেছে। সে তো নিজেই বলছে আমাকে বের করে দেয় নি। আমি ওই হলের অন্য রুমে
ওঠতে চাচ্ছি এজন্য ওই রুম থেকে নামছি। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আর কেউ
ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সুনাম নষ্ট করলে সেটা আমরা ব্যবস্থা করব।
এদিকে হলের আবাসিক শিক্ষক ড. ইলিয়াস হোসাইন বলেন, হলে ছাত্রলীগের ব্লক আছে কিনা তা বলছি না। তবে কয়েকটি কক্ষ তাদের আছে।
মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোস্তাক আহমেদ বলেন, হলে কোনো অনিয়ম হোক তা আমরা
চাই না। পলিটিকাল ব্লক আশা করি না। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা হলে আসন
পাবে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার ১৫ দিন পর আর কেউ হলে থাকার নিয়ম নেই। সে ছাত্রলীগ
কিনা সেটা আমাদের জানার বিষয় না। আর কোনো ছাত্রলীগ নেতা যদি ক্ষমতার
অপব্যবহার করতে চায় তাহলে বুঝতে হবে সে সঠিক ছাত্রলীগ নয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়াকে একাধিকবার
ফোন দিলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু
বলেন, আসলে আমরা চাই না কোনো কর্মী অপকর্ম করুক। ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নিজ
হাতে গড়া সংগঠন। এখানে ঢুকে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। আমি ওই হলের বিষয়ে খোঁজ
নিবো। কেউ ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সুনাম নষ্ট করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে অন্যের হয়ে পরীক্ষা (প্রক্সি) দিতে গিয়ে আটক হওয়ায় রাবি ছাত্রলীগের
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেনকে বহিষ্কার করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
শুক্রবার (২১ জুলাই, ২০১৭ সালে) সন্ধ্যায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। এঘটনায়
তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও রয়েছে এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিলে। ২০১৮
সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাবির মাদার বখ্শ হলে ছয় শিক্ষার্থীর কাছ
থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও মানিব্যাগ
ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটায় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাদীদ মুনতাসির এলাহী,
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন, মেহেদি হাসান সজল, সাংগঠনিক সম্পাদক
অর্ক, ছাত্রলীগ কর্মী শুভ্রসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জড়িত থাকার
অভিযোগ রয়েছে।