নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে :
রাজশাহীতে মহানগরীতে অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে চলছে জালিয়াতি ব্যবস্থা। এসব ডায়াগনস্টিক মালিকদের সাথে প্যাথলজিস্টদের রয়েছে অনৈতিক চুক্তি। একদিকে চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য, অন্যদিকে প্যাথলজিস্টদেরদের ফি দেয়ার জন্য ডায়াগনস্টিক মালিকরা ব্যবহার করেন নি¤œমানের অখ্যাত কোম্পানির রি-এজেন্ট। এতে সর্বশান্ত হতে হচ্ছে সাধারণ রোগী ও তার স্বজনদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্লিনিক মালিক বলছেন, ডাক্তাররা স্বাক্ষর বিক্রি করেন আমাদের কাছে। আমরা টেকনোলোজিস্ট দিয়েই কাজ করি। প্যাথলজিস্টরা কখনও এসে বা কখনও রিপোর্ট করে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিলে তারা স্বাক্ষর করে দেন। এলাকা ঘুরে দেখাগেছে,মহানগরীতে আনাচে কানাচে গড়ে উঠা অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক শ্রোণির পুঁজিবাদীরা এলাকার সাধারন আয়ের মানুষের অসুস্থতাকে নিয়ে ব্যবসা করে চলেছে দিনের পর দিন তারা। এখানে ভালো চিকিৎসক,নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। ফলে সেখানে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক)হাসপাতালের নাম করা ভালো ভালো চিকিৎসকদের নাম ভাংগিয়ে গ্রামের সরল সাদা লোকজনদেরকে নরমাল ডাক্তার ও রামেক হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে প্রতারক মুলক চিকিৎসা করানো হচেছ। যার ফলে রামেক হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীরা নামিদামি মোবাইল ফোন কিনে সেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সার্চ দিয়ে রোগির জন্য ওষধ লেখে জনপ্রতি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা হাতিয়ে নিতছেন। এদিকে,রেজিস্টেশন,চিকিৎসক,নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াই অলিগলিতে গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা ব্যবসা করে ক্লিনিক মালিকেরা অল্পদিনে কোটিপতি বুনিয়ে যাচেছ। অভিযোগ রয়েছে, ক্লিনিকগুলো লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও যথাযথ অপারেশন থিয়েটার ছাড়াই অহরহ সিজার করে যাচ্ছে। রোগীরা আসলে রাজশাহী হাসপাতালের ছাত্র-ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসার নামে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেকে শুধু সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসছেন। মনিটরিং না থাকা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই অনেকে এই ব্যবসায় নেমে পড়ছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র আরো জানাযায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ক্লিনিকে ১০ বেডের জন্য ৩ জন চিকিৎসক (সকাল, বিকেল ও রাতে প্রতি শিফট-এ ১ জন করে ৬ জন ডিপোমাধারী নার্স, ৩ জন ওয়ার্ড বয় ও ৩ জন আয়া থাকার কথা। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, লাইসেন্স ঠিক রাখার জন্য কাগজে-কলমে এ তালিকা ঠিক থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই তা নেই। অধিকাংশ ক্লিনিকেই নেই কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক। অথচ ক্লিনিকের সামনে বড় বড় ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের সাইনবোর্ড লাগানো থাকে। এসব সাইনবোর্ড দেখে রোগীরা ক্লিনিকে গিয়ে প্রতারিত হয়। বেশিরভাগ সময় আনাড়ি চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা। কোনো কোনো ক্লিনিকের রয়েছে নিজস্ব ডায়গনস্টিক সেন্টার এবং অনেক আলাদা ডায়গনস্টিক সেন্টারও রয়েছে। এসব সেন্টারে এক্স-রে, রক্ত, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, মলমূত্র ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো প্রয়োজন ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের ভুল পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিদিন শত শত রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো টেকনোলজিস্ট না থাকায় বেশিরভাগ সময় রোগীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন সেন্টারে একই পরীক্ষার ফল ভিন্ন ভিন্ন আসার নজির বিস্তর। এ কারণে রোগীরা অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। এবিষয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. কাজি মিজানুর রহমান জানান, অনুমতি ছাড়া যারা ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করবে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।