ইয়ানূর রহমান : নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর সমস্যায় জর্জরিত শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । দিনের পর দিন এমন অবস্থা চলতে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই। দালাল ও সিন্ডিকেট চক্র জিম্মি করে রেখেছে পুরো ব্যবস্থাপনাকে।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে জানান, শার্শা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারি বলেন, সিন্ডিকেট চক্রটি বেশ প্রভাবশালী। চক্রটির ক্ষমতা এতই শক্তিশালী যে তারা সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশও মানে না। এই কর্মচারি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কমপ্লেক্সটিতে সিন্ডিকেট চক্রের কারণে এমন অবস্থা হয়েছে ।
শার্শা বাসির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৬০ সালে উপজেলার দক্ষিন বুরুজ বাগান এলাকায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়। প্রথম দিকে ৩১ বেড থাকলেও বর্তমানে বেডের সংখ্যা ৫০। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটিতে নানা ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতি চলে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫০ বেড চালু হলেও জনবলের সুবিধা না থাকায় চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ স্টোরে রক্ষিত থাকলেও কোনো গার্ডের ব্যবস্থা নেই। যে কোন সময় এ সম্পদ খোয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। কমপ্লেক্সটিতে বেশ কয়েকটি বিভাগ নামেমাত্র থাকলেও সেখানে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। দন্ত বিভাগে গিয়ে কেউ চিকিৎসা পেয়েছেন এমন নজির সাম্প্রতিক সময়ে কখনো নেই। রোগীদের অভিযোগ, এ বিভাগে গেলে নানা অজুহাতে তাদের সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। সুকৌশলে এ বিভাগের ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে দেখা করার কথা বলা হয়। বিভিন্ন সূত্রে আরও নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে খাবার সাপ্লাই নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। প্রতিদিন রোগীদের যে খাবার দেওয়া হয় তা একেবারেই নিম্নমানের। প্রতিদিন খাবার তালিকায় যা থাকার কথা তা দেওয়া হচ্ছে না। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এখান থেকে যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা মুখে দেওয়া যায় না। বেশির ভাগ রোগীই বাইরে অথবা বাড়ি থেকে খাবার এনে খান। এ ছাড়া এখান থেকে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া তো দূরে থাক গজ-ব্যান্ডেজ আর তুলার মতো জিনিসও বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। বাথরুম গুলোর অবস্থা যাচ্ছেতাই। বেশির ভাগ ওয়ার্ডের বেডও ভাঙাচোরা। কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে এগুলো চালানো হচ্ছে। বাতাসের জন্য পর্যাপ্ত ফ্যান নেই। নেই পর্যাপ্ত লাইট। ফলে রাতের বেলা একেবারে ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। চারটি কেবিন থাকলেও সেগুলো নামেমাত্র। কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই সেখানে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ‘সিন্ডিকেট’ চক্র এসব ‘কেবিন’ নিজেদের দখলেই রাখেন। এ চক্রকে ম্যানেজ করলেই মেলে কেবিন।
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ও ওষুধ কেনা হয়। এই কেনা নিয়ে রয়েছে বড় রকমের দুর্নীতি। টেন্ডারের শর্তাবলি অনুযায়ী যে ওষুধ সরবরাহ করার কথা, তা মেলে না। আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ডাক্তারের সংকট চরমে রয়েছে। যে ক’জন ডাক্তার আছে তাদের মধ্যে অনেকে ঠিকমত হাজির থাকেনা। দিনের বেশির ভাগ সময় ডাক্তারদের খুঁজে পাওয়া যায় না। বেলা ১টার পর একজন ডাক্তারকেও পাওয়া যায় না। অথচ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াই টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপেপ্লক্সটিতে ডাক্তার থাকার কথা।
জানা যায়, ডাক্তারদের প্রায় সবাই বিভিন্ন ক্লিনিকে বসেন। ফলে তাদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ডাক্তার ও কর্মচারীদের জন্য একটি ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন রয়েছে যেখানে তারা কখন আসেন, কখন বেরিয়ে যান, এমনটি রেকর্ড হয়। কিন্তু বাস্তবে সেই মেশিনটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিকল করে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ডাক্তার, চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক, পরিছন্নতা কর্মী, গার্ড’র বেশ কিছু পদ খালি রয়েছে। এ গুলো পূরণ হলে যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার সমাধান হবে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, আগের তুলনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র অনিয়ম-দুর্নীতি কমেছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যোগদানের আগে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল। এখন সেগুলো নেই।