মোঃ হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
ঢাকা, গাইবান্ধা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১২ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলার প্রতিবাদে স্থানীয় সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু, পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রগতিশীল নেতা সাদেকুল ইসলাম দুলাল, জাসদ সভাপতি মুসলিম আলী মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক মুন্সি আমিনুল ইসলাম সাজু, সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হবি, ইমদাদুল হক, একেএম শামছুল হক, আব্দুল মতিন সরকার প্রমূখ।
গত মঙ্গলবার রংপুর মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট কোতয়ালী আমলী আদালতে সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকার বাদি হয়ে দুইটি মানহানির মামলা দায়ের করেন। একটি মামলায় যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহম্মেদ, মফস্বল ডেক্স ইনচার্জ আহসানুল কবির আসিফ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান ও সহযোগি প্রতিনিধি মাহাবুর রহমান, চাঁদনী বাজার পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি আবু জায়েদ, জনসংকেত পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি রাশিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়। আরেকটি মামলায় কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বার্তা সম্পাদক খায়রুল বাসার শামীম, মফস্বল বার্তা সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ সজল, সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি মামুন-উর-রশিদ, দৈনিক পরিবেশ পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম এবং ভোরের দর্পন পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শামছুল হক। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ সেপ্টেম্বর যমুনা টেলিভিশনে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়। সংবাদে বলা হয়, সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগে দুদকে চারটি মামলা রয়েছে। মামলা থাকা সত্ত্বেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে গিয়ে পিআইওর তোপের মুখে পড়েন যমুনার সাংবাদিক। এদিকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫২০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ২০০ বান্ডিল আত্মসাতের অভিযোগে পিআইওর বিরুদ্ধে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়। এসবের প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করেন দুদক। এ ছাড়া চলতি বছরের জুন ক্লোজিংয়ে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই ছয় কোটি টাকার বিল উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে দাখিল করেন। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বিল স্বাক্ষরে অপরাগতা জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বিল স্বাক্ষর করান পিআইও নুরুন্নবী।
মামলার বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয়, সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে টিআর কাবিখা ঘুষ গ্রহনের চারটি মামলার কোন সত্যতা পায়নি দুদক। দুদক মামলাগুলো থেকে পিআইওকে অব্যাহতি দিয়েছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে মাত্র ১৫০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া যায়। যা তৎকালীন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করা হয়েছে। জুন ক্লোজিংয়ে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের বিপরীতে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। যার বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে কিছু কাজ চলমান রয়েছে।
মামলার বিবরণে আরও উল্লেখ করা হয়, পিআইওর বিরুদ্ধে এসব সংবাদ যমুনা টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। একই সংবাদ কালের কণ্ঠ, জনসংকেত, চাঁদনী বাজার, দৈনিক পরিবেশ, ভোরের দর্পন পত্রিকায় পিআইওর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের একাধিক প্রতিবেদন-সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। এসব সংবাদ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে সরবরাহকৃত তথ্যে এসব সংবাদ প্রচার-প্রকাশ করেন। এমন সংবাদ টিভি, বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন ও ফেসবুকে প্রচারে পিআইওর নুরুন্নবীর মারাত্বক সম্মানহানি হয়েছে। এতে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ কোন টাকা উল্লেখ বা দাবি করা হয়নি।
এ বিষয়ে যমুনা টেলিভিশনের গাইবান্ধা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ-মামলা ও প্রমাণ আছে পিআইও নুরুন্নবীর বিরুদ্ধে। সর্বশেষ জুন ক্লোজিং হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে চাপ ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকার বিল স্বাক্ষর করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই সূত্রেই সরেজমিনে অনুসন্ধান, বিভিন্ন ডকুমেন্ট, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রচার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে সুন্দরগঞ্জের পিআইও নুরুন্নবী সরকার বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগগুলো তদন্ত করেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের গঠন করা তদন্ত কমিটি। কমিটি গত ১৪ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে যমুনা টিভিসহ কোন মিডিয়ায় প্রচারিত অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। জেলা প্রশাসক এ প্রতিবেদন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠিয়েছেন।