নাটোর প্রতিনিধি- মোটা অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নাটোরে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরসহ ভূ-সম্পত্তি মাত্র ২০ লাখ টাকায় বিক্রির দলিল স¤পাদন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নাটোর পৌরসভাধীন আমহাটি মৌজায় অবস্থিত পুকুর ছাতনী ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত দেখানো হয়েছে। এজন্য তৈরিও করা হয়েছে নতুন কাগজপত্র। শ্রেণি পরিবর্তনের রেকর্ড তৈরি করে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার পুকুরসহ জমি মাত্র ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করায় সরকার প্রায় ২৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে দলিল স¤পাদন করায় বিক্রেতা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে,গত ১২ সেপ্টেম্বর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নাটোর পৌর এলাকার এলাকার আমহার্টি ৮১ শতকের একটি জমি রেজিস্ট্রি হয়। যার দলিল নং ৭৯৭৪/১৯। এই জমিটির শ্রেণি অনুযায়ী রেজিস্ট্রি খরচ (রাজস্ব) হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকারও উপরে। নাটোর পৌরসভাধীন প্রতি শতক পুকুরের জমির সরকারী মূল্য নিধারণ করা আছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৯০৫ টাকা । কিন্তু ক্রেতা শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকার আবুল হোসেনের পুত্র বিসমিল্লাহ বস্ত্রালয়ের মালিক আলহাজ্ব শাহজাহান সরদার দলিল লেখকের যোগসাজশে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার জায়গাটিকে ইউনিয়নের জায়গা দেখিয়ে মাত্র ২০ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রি করেন। প্রকৃত পক্ষে পুকুরটি নাটোর পৌর এলাকার অর্ন্তভুক্ত ।এই জমিটির শ্রেণি অনুযায়ী রেজিস্ট্রি খরচ (রাজস্ব) হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকারও উপরে। বিক্রেতা আব্দুস সালাম এক কোটি ৩০ লাখ বুঝে পেয়ে সরল মনে জমিটি বিক্রয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন । পরে দলিলের নকল তুলে তিনি দেখতে পান ক্রেতা শাহজাহান সরদার দলিল লেখকের যোগসাজশে ২০ লাখ টাকায় দলিল সম্পাদন করেছেন । ব্যক্তিগত আয়কর প্রদানে বিড়ম্বনা হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি ক্রেতার নিকট থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য চলতি বছরের ২০ সেপ্টেস্বর তিনি নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর অ অভিযোগের অনুলিপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিষ্ট্রার,সাব রেজিষ্ট্রার নাটোর সদর ,সহকারী কমিশনার (ভূমি)বরাবর প্রেরণ করেন।
নাটোর সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দীর্ঘদিন ধরে দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ মতে, সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দীর্ঘদিন ধরে জমির শ্রেণি পরির্বতন করে জমির মূল্য কম দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে দোলা জমিকে ডাঙ্গা এবং ডাঙ্গা জমিকে বাঁশঝাড়, ভিটা ও ডোবা দেখিয়ে কম খরচে জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। দামি জমিকে কম মূল্যের জমি দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করায় প্রতিদিন সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রেজিস্ট্রির সময় বিক্রিত জমির ভুয়া মাঠ পরচা, খাজনার রসিদ, খারিজের কাগজপত্র দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এসব কাজ করছেন দলিল লেখক সমিতির একটি সিন্ডিকেট
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন দলিল লেখক জানান, ২০১৭ সাল থেকে অদ্যবদি চক্রটি উৎকোচের বিনিময়ে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জমির
দলিল রেজিস্ট্রি করে আসছেন। এতে করে সরকার দুই বছরে অন্তত কয়েকশ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তারা জানান, শুধুমাত্র ২০১৯সালের আগষ্ট ও সেপ্টেম্বরে রেজিস্ট্রি হওয়া দলিলগুলো বের করে তদন্ত করলেই চক্রটির অনিয়ম ধরা পড়বে।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি হেলাল জোয়ারদারঅনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কোন সিন্ডিকেট নেই।
এ ব্যাপারে সদর সাব-রেজিস্ট্রার অসিম কুমার বণিক বলেন, তিনি যোগদানের পর থেকে সরকারি রাজস্ব যাতে ফাঁকি না যায় সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক রয়েছেন। দলিল লেখক সমিতির নেতাদের চাপের কারণে অনেক সময় শ্রেণি পরিবর্তন করে জমি রেজিস্ট্রি করা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একসঙ্গে বসবাস করতে হলে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়।
নাটোর সদর উপজেলার এসিল্যান্ড আবু হাসান বলেন , এধরণের অভিযোগ পাইনি । পেলে তদ›তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
আব্দুস সালাম অভিযোগকারী -০১৭১২৯৭৫২৫৮
সাজাহান সরদার-ক্রেতা -০১৭৩৩-২৯২৮৮৪
আবু হাসান এসিল্যান্ড-০১৭৬২-৬৯২১২০
অসিম কুমার বণিক-০১৭১১-৪৭২৬৪৩