নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নুর বাবু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) নয় বছরেও দিতে পারেনি পুলিশ। ২০১০ সালে বিএনপির মিছিলে হামলা চালিয়ে বাবুকে হত্যা করা হয়। এ সময় বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র, চারজন সাংবাদিক, ক্যামেরাম্যানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় বাবুর স্ত্রী মহুয়া নুর কচি আওয়ামী লীগের ২৭ নেতাকর্মীসহ ৪৭ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন। সব আসামি জামিনে মুক্ত আছেন।
মহুয়া নুর কচি বলেন, ২০১০ সালের ৮ অক্টোবর সানাউল্লাহ নুর বাবুর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বনপাড়া বাজারের দিকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বাজারের উত্তর পাশে পৌঁছলে আওয়ামী লীগকর্মীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে এবং লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিছিলকারীদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। নুর বাবু, বড়াইগ্রাম থানা যুবদলের সভাপতি রফিক সরদার ও বিএনপিকর্মী আলী আহত হন। হামলাকারীরা বাবুকে কুড়ালের গোড়ালি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। উপর্যুপরি আঘাতে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন চারজন সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান। বিএনপিকর্মীরা নুর বাবু ও রফিক সরদারকে স্থানীয় পাটোয়ারী হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই বাবুর মৃত্যু হয়। ৯ অক্টোবর মহুয়া নুর কচি বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন। মামলায় নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বর্তমানে বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম এ জাকির হোসেন, বনপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন মোল্লা, বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কে এম জিল্লুর রহমান জিন্নাহ, যুবলীগকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলু, মাসুদ সোনার, সৈকত, রেজাউল করিম রিকন, ছাত্রলীগকর্মী রাপ্পু, সেলিম, হাশেম, বাদশাহ, যুবলীগ নেতা গৌতম চন্দ্র, বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, রিপন সোনার, মালেক, মাহাবুব, জনি, আশরাফুল ইসলাম মিঠু, হাবিব, মমিন, বাবলু মোল্লা, লুত্ফর, বাবু ও আশরাফকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত সবাই আদালত থেকে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
মহুয়া নুর কচি জানান, বাবু হত্যা মামলার তদন্ত প্রথমে ডিবি পুলিশ ও পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু গত আট বছরেও মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। কচি জানান, তিনি জিডিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আট বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন না জমা দেওয়ায় তিনি মামলায় বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কে আছেন তিনি জানেন না। কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেন না।
বড়াইগ্রাম উপজেলা যুবদল সভাপতি রফিক সরদার বলেন, সরকার নিজ দলীয় আসামিদের বাঁচাতে বাবু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিচ্ছে না। তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অভিযুক্তরা সরকারদলীয় সমর্থক ও প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযোগপত্র দিতে দেরি করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মামলার দীর্ঘসূত্রতা আর অভিযোগপত্র না দেওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে হতাশ তারা। এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন তারা।
আসামি ও বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বাবু বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণেই খুন হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনায় জড়িত নেই। বাবু আহত হওয়ার পরে তাঁকে পাটোয়ারী ক্লিনিকে ও পরে মাইক্রোবাসে অহেতুক বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা পর রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। মাইক্রোবাস যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বাবু হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে।’
নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। চতুর্থবারে দায়িত্ব পাওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহীর সিআইডির পুলিশ সুপার ড. নাজমুল জানান, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অল্প দিনের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।