রাজশাহীর শাহ মাখদুম থানার সামনে নিজের গায়ে আগুন দেওয়া সেই কলেজছাত্রী মারা গেছেন।
বুধবার (২ অক্টোবর) সকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই ছাত্রীর নাম লিজা রহমান (১৯)। গত ২৮ সেপ্টেম্বর থানা থেকে বেরিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন তিনি।
আগুনে তার শরীরের ৬৩ শতাংশ পুড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।
লিজা গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। লিজা রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নগরীর পবাপাড়া এলাকার একটি মেসে ভাড়া থাকতেন থাকতেন তিনি।
লিজার সহপাঠীরা জানান, লিজা প্রেম করে বিয়ে করেন। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে ও রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। থাকেন রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে।
পরিবারকে না জানিয়েই সাখাওয়াত হোসেন লিজাদের গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে গত ২০ জানুয়ারি তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও পরে কলহ দেখা দেয়। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় সাখাওয়াত লিজাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেননি। একপর্যায়ে সাখাওয়াত স্ত্রী লিজার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
গত জুলাই মাসে লিজা সাখাওয়াতের খোঁজে ছুটে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। লিজা স্বামীল বাড়িতে গেলে সাখাওয়াত বাড়ি ছেলে পালিয়ে যান।
পরে লিজা নাচোল থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ সাখাওয়াত ও তার বাবাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে লিজাকে পাঠিয়ে দেন। এরপর তারা কয়েকদিন একসঙ্গে থাকেন। পরে সাখাওয়াত রাজশাহীতে ফিরে আবারও স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
অভিযোগে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে লিজার সঙ্গে দেখা করেন সাখাওয়াতের এক ভগ্নীপতি। ওই সময় সাখাওয়াতও সঙ্গে ছিলেন। তারা উভয়েই লিজাকে মারধর করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই থেকে লিজা নগরীর শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ দেয়ার চেষ্টায় গত কয়েকদিন ধরে ঘুরছিলেন।
লিজার বন্ধুরা জানান, তিনি শনিবার দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আবারও শাহ মখদুম থানায় যান। সেখানে ডিউটি অফিসারকে অনেকবার অনুরাধ করেন তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য। ওসির সঙ্গে শেষে দেখা করেন কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পাগল বলে পাত্তা না দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন।
থানা থেকে বের হয়েই কাছের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে থানার সামনে আসেন। সেখানে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মুহূর্তের লিজার শরীর পুড়ে যায়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। পরে প্রায় অচেতন অবস্থায় লিজাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর থেকে ঢাকা মেডিকেল বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসাধীন ছিলেন লিজা। অবশেষে আজ সকালে মৃত্যুর কাছে হার মানেন এই তরুণী।
এদিকে ঘটনা তদন্তে কাজ করছে মানবাধিকার কমিশন। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার নগরীর শাহ মখদুম থানায় যায় কমিটি। এ সময় কমিটির প্রধান ও মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল মাহমুদ ফয়জুল কবিরের সঙ্গে অপর তিন সদস্য ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান তদন্ত দলের প্রধান।