রামিম হাসান,ঝিনাইদহ:
“আমি তখন তোমাদের মতো, দশম শ্রেণীতে পড়তাম। দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, চারিদিকে শত্রুরা নিরিহ বাঙ্গালীকে গুলি করে মারছে। নিজের শরীরের রক্ত তখন টগবগ করে ফুটছিল, কিন্তু বাড়িতে মা ছফুরা খাতুন গুরুত্বর অসুস্থ। মাঝে মধ্যেই মনে হতো যুদ্ধে যাবো, অস্ত্র দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করবো। কিন্তু মায়ের কারনে পারছিলাম না।
শেষে মা ছফুরা খাতুন একটু সুস্থ হলেই ৭১ সালের নভেম্বরের দিকে চলে যায় লড়াইয়ের মাঠে। শত্রুর সঙ্গে লড়াই করেছি জীবনবাজি রেখে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা এলাকায় একাধিক লাড়াইয়ে অংশ নিয়েছি, শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন দেশে ফিরে এসেছি। দেশে এসে আবার পড়ালেখা করে কর্মজীবন, তারপর অবসর। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প শিক্ষার্থীদের শোনালেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম।
মোঃ শরিফুল ইসলাম (৬৫) ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মৃত মকছেদ আলীর পুত্র। বর্তমানে তিনি কালীগঞ্জ শহরে বসবাস করেন। তার দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি” কর্মসুচির আওতায় মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নূর আলী খাঁনের পুত্র বিপুল হোসেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তার জাহান, শিক্ষক হাসকিল রহমান, আব্দুল আজিজ, হামিদুল ইসলাম, এস.এম টিপু, সাকিব হাসান, তাপস কুমার সেন, সীমা রাণী ঘোষ সহ অন্যরা।
শরিফুল ইসলাম জানান, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন ঐতিহাসিক ভাষণ দেন তখনই বুঝে নিয়েছিলেন এবার শত্রুরা বিদায় নেবে, দেশ স্বাধীন হবে। আর তিনি সেই শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নেবেন। তিনি সেই অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করেছেন, কিন্তু পারিবারিক কারনে একটু দেরিতে গেছেন। যখন যুদ্ধে যান তখন আর বাইরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। চুয়াডাঙ্গাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দামুরহুদা এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। ওই এলাকার পিরপুর যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। তার কমান্ডার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আরশেদ আলী। এছাড়া তাঁর সঙ্গে আরো যারা যুদ্ধ করেছেন তাদের অনেকে মারা গেছেন। যাদের মধ্যে গোলদার হোসেন, মাহতাব উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম তার খুবই কাছের বন্ধু ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই আর অনেক মানুষের জীবনের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছো, তোমাদের দায়িত্ব এই দেশটাকে ভালো করে গড়ার। আর সে জন্য ভালোভাবে পড়ালেখা করতে হবে। পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সেই সঙ্গে নৈতিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। শেষ মিষ্টিমূখ এর মাধ্যমে গোটা অনুষ্ঠান শেষ হয়।