সরকারের গণপূর্ত বিভাগের টেন্ডারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জি কে শামীমের। উর্দ্ধতন কমকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি টেন্ডার বাগাতেন। বিনিময়ে সংশ্লিষ্টদের পকেটে চলে যেত মোটা অঙ্কের ঘুষ, কখনো আবার কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনে সুন্দরী মডেলদেরও কাজে লাগাতেন। জি কে শামীমের কাছ থেকে নিয়মিত ঘূষ নেওয়া দুই কর্মকর্তা হলেন গণপূর্তের সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত প্রকৌশলী আব্দুল হাই। এই দুই প্রকৌশলীকে শামীম ঘুষ দিয়েছেন দেড় হাজার কোটি টাকা। টেন্ডার পেতে শামীম বিভিন্ন সময় রফিকুল ইসলামকে ঘুষ দিয়েছেন ১ হাজার ১০০ কোটি ও আব্দুল হাইকে দিয়েছেন ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু শামীম র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর এই দুই প্রকৌশলীকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধরা পড়ার ভয়ে তারা গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম অবসরে যান। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সেখানে একচ্ছত্রভাবে ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন শামীম। তবে রফিকুল অবসরে যাওয়ার পরও গণপূর্তে শামীমের প্রভাব কমেনি। কমিশন দিয়ে তার প্রভাববলয় বজায় রাখেন তিনি। গণপূর্তে এমন কথা প্রচলিত আছে, ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে নানা দপ্তরে ‘তদবির’ করে রফিকুলকে প্রধান প্রকৌশলী বানিয়েছিলেন শামীম।
গণপূর্ত অধিদফতরের একাধিক সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টেন্ডার বাণিজ্য করে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ অর্থ দিয়ে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন তিনি। চাকুরিতে থাকার সময় সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রী ও সচিবের কালেক্টর ছিলেন এ প্রধান প্রকৌশলী। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম কানাডায় নিকটাত্মীয়ের নামে বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া প্রথম ঘরের স্ত্রীর ছেলে শাওনের মাধ্যমে হংকংয়ের এইচএসবিসি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা জমা রেখেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রফিকুলের নামে ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ধানমন্ডির ৮নং রোডে হাউজ নং-৯, রাজধানীর গ্রীনরোডের গ্রিন কর্নার নামের অ্যাপার্টমেন্টে আলিশান দুটি ফ্ল্যাট, গুলশানের ৩৫নং রোডে ৪৪নং বাড়িতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং বনানীর ৭নং রোডে এফ/১৭ আনোয়ার মঞ্জিল নামে একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া মিরপুরে ১০ কাঠা জমির ওপর ১২টি ফ্ল্যাটবিশিষ্ট ছয়তলা বাড়ির মালিকও তিনি। চাকুরিতে থাকার সময়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রতিটি বড় বড় কাজের টেন্ডার থেকে ‘নেগোসিয়েশন মানি’ হিসেবে রফিকুল ইসলাম এবং জি কে বিল্ডার্সের মালিক গোলাম কিবরিয়া শামীম শতকোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রফিকুল ইসলামের নানা অনিয়ম সংক্রান্ত একটি দীর্ঘ লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন খোদ তার সহকর্মী অর্থাৎ গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। প্রকৌশলী ফজলে রাব্বী লিংকনের স্বাক্ষরিত এই অভিযোগ দুদকে জমা হওয়ার পর তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে কমিশন।
একইভাবে আবদুল হাইও অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তার সঙ্গে টেন্ডার মুগল শামীমের যোগসাজস ছিল।