চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়েছে ছাত্রজনতা ও এলাকাবাসী

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি ঃ
পাবনার চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দাবিদার মওলানা মো. আবু ইসহাক’কে তার অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রজনতা ও এলাকাবাসীরা। বের করে দিয়ে তার কক্ষে তালা লাগানো হয়। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মো. রবিউল করিম’কে দায়িত্ব পালনের জন্য চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়। এসময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাদ্রসার সহকারী অধ্যপক ও গভর্নিং বডি কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. রবিউল করিম। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এলাকাবাসী, ছাত্রজনতা মাদ্রাসায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে রবিউল করিম’কে বসিয়ে দেন ও আবু ইসাহক’কে বের করে দেন।

জানা গেছে, চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দু’জন দাবি পালন করে আসছিলেন। এরমধ্যে মওলানা মো. আবু ইসাহক গত ৭ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত বছর মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ৭টি শুন্য পদে লোকবল নিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এসময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মওলানা মো. আবু ইসহাক অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন। বিধিমোতাবেক আবু ইসহাক’কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে বাদ রেখে সহকারী অধ্যাপক মো. রবিউল করিম’কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন মাদ্রাসার গভর্নিং বডি। কিন্তু মওলানা আবু ইসহাক দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে সবকিছু আগের মতোই নিয়ন্ত্রণে রাখেন। সহকারী অধ্যাপক রবিউল করিম বারবার দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও আবু ইসহাক তা না করে তালবাহানা করতে থাকেন। তিনি চাটমোহর উপজেলা ওলামালীগের সদস্য বলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অধ্যক্ষেরে চেয়োর আকরে ধরে রাখে। এসময় নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রবিউল করিম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এনিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

কিন্তু তাতেও কোন সুরাহা না হলে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এলাকাবাসী মাদ্রাসায় গিয়ে মওলানা আবু ইসহাকের কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত আধ্যক্ষের দায়িত্বসহ অন্যান্য কাগজপত্র চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আছে। ছাত্র জনতা ও এলাকাবাসী কাগজপত্র আনতে বলেন। তিনি কাগজপত্র আনতে নারাজ। তখন ছাত্র জনতা ও এলাকাবাসী মাওলানা মো. আবু ইসহাক’কে চেয়ার ছেড়ে দিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে তারা আবু ইসহাক’কে সন্মানের সহিত বের করে দিয়ে মো. রবিউল করিম’কে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দায়িত্ব পালন করার জন্য বলেন। এসময় এলাকার জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক প্রতিনিধি, সংবাদকর্মীর, এলাকাবাসী ও ছাত্র জনতাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে মো. রবিউল করিম বলেন, আমি নিয়ম ও আইন অনুযায়ী এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। গভর্নিং বডি পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমি এই পদে আসীন আছি। মওলানা মো. আবু ইসহাক জোরপূর্বক, ক্ষমতার দাপট দিয়ে, স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে অবৈধভাবে দায়িত্ব আকড়ে ছিলেন। এলাকাবাসী তাকে অপসারণ করেছেন।

এ বিষয়ে মওলানা মো. আবু ইসহাক বলেছেন, শুধুমাত্র নিয়োগকালীন সময়ের জন্য রবিউল করিমকে সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে। সভাপতি অপসারণ হয়েছেন। যার কারণে তার দায়িত্বও শেষ হয়ে গেছে। তাকে পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। আমি ফের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি মো. রেদুয়ানুল হালিমের সাথে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় কথা বললে তিনি বলেন, আমি গভর্নিং বডির মিটিং ডাকতে বলেছি। রবিউল করিম দায়িত্ব নিয়েছেন, পালন করুক। মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্ত হয় সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।