গুনাহ করে প্রকাশ করা আরও বড় গুনাহ

মানুষ মাত্রই ভুল হবে। মানুষ গুনাহ করবে এটা স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হলো যখন কেউ গুনাহ করে তওবা করে না। অথচ তওবা করলে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে খুশি হন।

আমাদের প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ মাত্রই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরাই হচ্ছে উত্তম’ (তিরমিজি ২৪৯৯)। তওবা করলে আল্লাহ তাআলা কীরকম খুশি হন সে ব্যাপারে একটি হাদিস অনেক বেশি প্রসিদ্ধ।

হাদিসে আছে, বান্দার তওবায় আল্লাহ সেই লোকের চেয়েও খুশি হন যার খাদ্য ও পানীয় নিয়ে সওয়ারি উট হঠাৎ গভীর মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর লোকটি হতাশ হয়ে একটি গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়ল। সে অবস্থায় হঠাৎ উটটিকে নিজের কাছে দাঁড়ানো দেখতে পেলে সে উটের লাগাম ধরেই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলতে লাগল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দা! আর আমি তোমার প্রভু! সে আনন্দের আতিশয্যেই এ ধরনের ভুল করে বসল। (মুসলিম)

গুনাহ করে ফেললে আমাদের করণীয় হচ্ছে সেই গুনাহ স্মরণ করে অনুতপ্ত হৃদয়ে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। ওই গুনাহ আর জীবনে দ্বিতীয়বার না করার প্রতিজ্ঞা করা। অনুতপ্ত না হয়ে নিজের গুনাহ কাউকে বলে বেড়ালে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন।

কেউ যদি গুরুজন কারও সাথে বেয়াদবি করে ফেলে এরপর ক্ষমা চায় তাহলে ওই গুরুজন অবশ্যই খুশি হবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি কেউ বেয়াদবি করে সমাজে তার বেয়াদবির ঘটনা প্রচার করে বেড়ায় তাহলে ওই গুরুজন নিশ্চয়ই নাখোশ হবেন।

আল্লাহ তাআলার গায়রত তো আরও বেশি। তার সাথে পাপ করে, তার অসন্তুষ্টির কাজ করে মানুষকে বলে বেড়ানো আরও বড় গুনাহ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে তার বান্দাদের উদ্দেশে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ কর।’ (সুরা আনআম ১২০)

কোরআনে আরও বলা আছে, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।’ (সুরা নিসা ১৪৮)

কেউ গুনাহ করে প্রকাশ করলে তাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সব উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী এর ব্যতিক্রম। আর নিশ্চয়ই এটা বড় অন্যায় যে, কোনো লোক রাতে অপরাধ করল, যা আল্লাহ তায়ালা গোপন রেখেছেন। কিন্তু সে সকালে মানুষের কাছে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক, আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটালো যে আল্লাহ তার পাপকর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেয়া আবরণ খুলে ফেলল।’ (বুখারি ৬০৬৯)

এ জন্য যত ছোট গুনাহ হোক না কেন তা প্রকাশ করা যাবে না। একে তো আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হবেন এবং সেই গুনাহ ক্ষমা করবেন না। আরেকটি হলো গুনাহ প্রকাশ করলে মানুষ ও অন্যান্য বস্তু সে গুনাহের সাক্ষী হয়ে যায়। তাই গুনাহ প্রকাশ করে সাক্ষী বাড়ানো যাবে না।