লালমনিরহাট প্রতিনিধি॥ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দরপত্রে অনীয়ম করায় ঠিকাদারের তোপের মুখে পড়েন প্রধান অফিস সহকারী(বড়বাবু) রফিকুল ইসলাম। আদিতমারী থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের রোগীর পথ্য, স্টেশনারী ও ধুপী কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করতে দরপত্র আহবান করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দরপত্র অনুযায়ী গত ১৯ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত ৩টি গ্রুপে ২০টি দরপত্র বিক্রি হয়। ২০ আগস্ট ১৩টি দরপত্র জমা হলে পরদিন দরপত্র যাচাই বাচাই কমিটি ৪টি দরপত্র বাতিল করে ৯টিকে বৈধতা দেন। এরই মাঝে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ রংপুরের হারাগাছ এলাকার আব্দুর রাজ্জাক লেবু অথবা একই এলাকার মাহিন ট্রেডার্সকে পথ্যের ঠিকাদারী প্রদানের জন্য একটি ডিও লেটার প্রেরন করেন। দরপত্রের বিধিমালার ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্থানীয় বাজার দরের সাথে মিল রেখে দরপত্র চুড়ান্ত করার কথা থাকলেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মন্ত্রীর ডিও লেটারের ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাক লেবুকে চুড়ান্ত নির্চান করে কমিটি। এতে বাকী দরপত্রদাতা স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। অফিস আদেশ না দিয়ে বুধবার হঠাৎ নতুন ঠিকাদারকে পথ্য সরবরাহ করতে বলেন হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী (বড় বাবু) রফিকুল ইসলাম। খবর পেয়ে বাকী দরপত্র দাখিলকারী ঠিকাদাররা নোটিশ বোর্ডে এ সংক্রান্ত কোন নোটিশ না পেয়ে বড় বাবুকে এ অনীয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করে তোপের মুখে ফেলেন। উভয়ের মাঝে চরম বাক্য বিনিময় হলে আতংকিত হয়ে পড়ে হাসপাতালের পরিবেশ। কৌশলী বড় বাবু নিজের দোষ আড়াল করতে উল্টো ঠিকাদার স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা হামলা চালাচ্ছে মর্মে থানায় ফোন করে। খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌছে পুলিশ উত্তাপ্ত পরিবেশ নিয়ন্ত্রন করেন। হাসপাতালে দরপত্র দাখিলকারী ও বর্তমান ঠিকাদার জমশেদ আলী জানান, দরপত্রের চুড়ান্ত ফলাফল নোটিশ বোর্ডে কিংবা দরপত্র দাখিলকারীদের চিঠি না দিয়ে হঠাৎ বড় বাবু মৌখিক আদেশ দিয়ে নতুন ঠিকাদারকে কাজের আদেশ দেন। যা সম্পুর্নরুপে অবৈধ। বড় বাবু নিজে স্টেশনারী ও পথ্যের ঠিকাদার হতে অন্যের লাইসেন্স দিয়ে জাতীয় পার্টির এক নেতাকে দিয়ে পত্রপত্র দাখিল করেন এবং সেটাই চুড়ান্ত করেন। এ জন্য কৌশলে মন্ত্রীর ডিও লেটারও সংগ্রহ করেন বড় বাবু। যুবলীগ নেতা শেখ ট্রেডার্স ও লাকি এন্টারপ্রাইজের পথ্যের ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, বড় বাবু নিজেই বহিরাগত লাইসেন্স দিয়ে ঠিকাদার সেজে স্বাক্ষর করে দরপত্র বাগিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন। তাই অফিস আদেশের তোয়াক্কা না করে মৌখিক নির্দেশনায় কাজ শুরু করেন। এ বিষয়ে জানতে গেলে উল্টো আমাদেরকে হয়রানী করেন। তিনি এ অনীয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তবে এ সব বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি অভিযুক্ত প্রধান অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম। আদিতমারী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেশকাতুল আবেদ বলেন, মন্ত্রী মহোদয় ডিও লেটার দিলেও নিয়ম নীতি মেনে দরপত্র চুড়ান্ত করনের প্রক্রিয়া চলমান ছিল। কিন্তু প্রধান অফিস সহকারী আমাকে না জানিয়ে মৌখিক ভাবে কাজের নির্দেশ দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্ঠি হয়েছে, যা বিধি সম্মত নয়। এ অনীয়ম ও উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতির তদন্ত ও ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত পুর্বের ঠিকাদারকে আপাতত কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বড় বাবু’র অনীয়মের তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।