মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: নানান অনিয়ম-দূর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে ও নতুনত্বের ছোঁয়ায় এলাকাকে এগিয়ে নিতে খুব দ্রুত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর-দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন চান দুই ইউনিয়নবাসী। রুপকল্প-৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় নিজেদের ইউনিয়নের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য দ্রুতই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবী করছেন এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরে ওই দুটি ইউনিয়নের ৩ জন (১ জন চেয়ারম্যান, ১ মেম্বার, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১ জন মহিলা মেম্বার) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বিদেশে থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে শূন্য ঘোষণা করা হয়নি ওই ৩ পদ এবং ২ জন মেম্বার নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন জনবিচ্ছিন্ন। তাই তাদের কাছ থেকে নিজেদের কাঙ্খিত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নবাসী।উপজেলার একাধিক আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় দশঘর-দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুতই এই দুটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবী জানিয়ে আসছেন সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন সময়ে ওই ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার নির্বাচনের দাবীতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছেন ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণ। বিদেশে থাকা জনপ্রতিনিধিদের আসন শূন্য ঘোষণা করে সেগুলোতে উপ-নির্বাচন আয়োজন না করা হলেও সম্প্রতি দেওকলস ইউনিয়নের ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার চৌধুরী শারমিন তানিয়ার পদত্যাগের পর সেখানে ঠিকই উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই ইউনিয়নগুলোতে সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার ফলে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জনগণ নিজেদের প্রাপ্য সম্মান পাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকার পাশাপাশি কাঙ্খিত উন্নয়নের ছোঁয়া থেকেও বঞ্চিত রয়েছেন। অনেক জনপ্রতিনিধিরা সরকারের গ্রহন করার নানান প্রকল্পগুলোতে নামে-বেনামে কিংবা বাস্তবায়ন করা একই উন্নয়ন একাধিক প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আতœসাৎ করছেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের স্ত্রী-কন্যাদের নামে মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ নানান প্রকারের ভাতা উত্তোলন করে প্রকৃত গরীব জনসাধারণকে ভাতা পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছেন। শালিস বিচার করার ক্ষেত্রে অনেকেই আবার জনসাধারণের সাথে অনৈতিক আচরণ প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।এলাকাবাসীর আরোও অভিযোগ, ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও দশঘর ইউনিয়নের দশঘর গ্রামের শফিকুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর হঠাৎ করেই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে অদ্যবধি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, আর দেশে আসেন নি। একই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সায়েস্তা মিয়া ২০০৮ সালের প্রথম দিক থেকেই যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন অদ্যবধি। তিনিও আর দেশে আসেননি। দেওকলস ইউনিয়নের ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার আছারুন বেগম নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েক দফা বিদেশ গিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই জনপ্রতিনিধিরা এতো দিন ধরে বিদেশে থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের পদগুলো শূন্য ঘোষণা করে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীদেরকে থাকতে হচ্ছে নিজেদের কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।জানা গেছে, ২০০৩ সালে উপজেলার দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মামলা জটিলতার কারণে বিশ্বনাথের দশঘর ইউনিয়ন ও জগন্নাথপুরের মিরপুর ইউনিয়নের নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকে। তাই এত দিন ফেরিয়ে গেলেও ওই দুই ইউনিয়নে আর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। একই কারণে আটকে থাকার পরও সম্প্রতি জগন্নাথপুরের মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও বিশ্বনাথের দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে ইউনিয়নবাসীর মনে বিরাজ করজে চরম হতাশা। চরম ভোগান্তিতে থাকা জনসাধারণ জীর্নদশা থেকে মুক্তি পেতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নির্বাচনের।এদিকে ২০১১ সালে উপজেলার দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ইউনিয়নের আলাপুর গ্রামের তাহিদ মিয়া। এরপর ২০১৬ সালের ৭মে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সময়ও ওই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্বাচনের মাত্র ৩/৪ দিন পূর্বে মামলা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বর্ণালী পাল বলেন, বিধিমতে উপজেলার দেওকলস-দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আশা করি শীঘ্রই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।