মোঃ হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
রাশেদুলের বিলুপ্ত প্রায় বিল্পব পয়সা (মুদ্রা) মহল যেন দুলর্ভ যাদুঘর। ইতিমধ্যে নজর কেরেছে সকলের। কিন্তু পৃষ্ট পোষকতার অভাবে একটি ঘর নির্মাণ করতে পারেনি আজও রাশেদুল। দেশের বিভিন্ন মেলায় ফেরি সাজিয়ে হাজারও মুদ্রার সংগ্রহ নতুন প্রজন্মকে দেখানোর চেষ্টা করছে রাশেদুল। বিনিময় ব্যবস্থার বিভিন্ন অসুবিধা দূর করার জন্য মুদ্রার প্রচলন ঘটে খিষ্টপূর্ব ৩ শতকে। কালের আবর্তনে এসব প্রাচীনতম ধাতব মুদ্রাগুলো বিলুপ্তির পথে। তবে সৌখিনতা ও উদ্যোমের বশে হারিয়ে যাওয়া এসব প্রাচীন ধাতব মুদ্রা ও নোট সংগ্রহ করে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে উপজেলার জামাল গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রাশেদুল ইসলাম গড়ে তুলেছে বিশাল মুদ্রার সংগ্রহশালা। সেখানে প্রাচীন সময়ের আধা পয়সা থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ধাতব স্বর্ণমুদ্রা, পয়সা কড়ি ও নোট স্থান পেয়েছে।
রাশেদুল পেশায় একজন নর সুন্দর (নাপিত)। এলাকার লোকজন তাকে পয়সা প্রেমিক বলে ডাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত আত্মীয়-স্বজনের কাছ পুরোনো, অচল ও দেশী-বিদেশী পয়সা সংগ্রহ করে আসছে সে। তিনি তার ছেলের নামে এই সংগ্রহশালার নাম দিয়েছেন ‘বিপ্লব পয়সা মহল’। বিলুপ্ত পয়সাকড়ি বর্তমান প্রজন্মের কাছে পরিচিতির মাধ্যমে অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করাই একমাত্র লক্ষ্য বলে দাবি তাঁর। মাটির পাতিল ও ঢাকনার উপর থরে থরে সাজিয়ে রাখা এই বিশাল বিলুপ্ত পয়সার সম্ভার দেখতে প্রতিদিনই ভীর করে এলাকার উৎসুক জনতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা। তাঁর আশা ও স্বপ্ন বিলুপ্ত পয়সার এই সংগ্রহশালাকে ভবিষ্যতে রুপ দিতে চান জাদুঘরে। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রাশেদুলের পয়সার সংগ্রহশালা ইতিমধ্যে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রর্দশনীর মাধ্যমে বেশ সুনামও অর্জন করেছে। তার পয়সা মহলে স্থান পেয়েছে অতীতের বিভিন্ন রাজা-বাদশা, বৃটিশ, জমিদার ও মুঘল আমলের ব্যবহৃত পয়সাসহ স্বর্ণমুদ্রাও। আদিযুগে পয়সা বা মুদ্রার প্রচলন ছিল না, তখন বিনিময় প্রথা চালু ছিল। এরপর বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষ কড়ি ব্যবহার করত, তারপর ধীরে ধীরে পয়সার প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু সেই সব আদি ও প্রাচীন পয়সাকড়ি এখন বিলুপ্তির পথে। তবে রাশেদুলের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে আদিযুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত পয়সা সংগ্রহের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে অতীত ইতিহাস তুলে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের জামাল গ্রামে নিজ বাড়িতে গিয়ে কথা হয় পয়সা প্রেমিক রাশেদুলের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বিগত কয়েক বছর আগেও পাঁচ পয়সা, দশ পয়সার প্রচলন ছিল। বর্তমানে পয়সার যুগ বিলুপ্তির পথে। এই ধারনা থেকেই পয়সা সংগ্রহ শুরু করি। অনেক দিনের চেষ্টায় আমার এ সংগ্রহশালায় অচল, বিলুপ্ত ও দেশী-বিদেশী প্রায় দশ হাজার পয়সা রয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বাঙালী তথা বিশ্বের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারে প্রর্দশনীর ব্যবস্থা করি। তিনি আরো বলেন, তার পয়সার এই সংগ্রহশালাকে একদিন ছোট্ট জাদুঘরে রুপান্তরিত করবে। ভবিষৎ প্রজন্ম যাতে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস সহজে জানতে পারে সে জন্য আমার এই সঙগ্রহশালা। রাশেদুল নির্দিষ্ট একটা জায়গা কিংবা ঘর স্থাপনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছে।
তার বাড়িতে পয়সার সংগ্রহশালা দেখতে আসা পাশের গ্রামের আশাদুজ্জামান বলেন, রাজা বাদশার সময়ের পয়সাগুলো দেখে আমার খুবই ভাল লেগেছে এবং অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে একটা ধারণা হয়েছে। তিনি রাশেদুলের পাশে দাড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারকে অনুরোধ জানান।
রাশেদুলের পয়সা মহলের ব্যাপারে কথা হয়, গাইবান্ধার-১ সুন্দরগঞ্জ আসনে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সাথে। তিনি বলেন, রাশেদুলের পয়সা সংগ্রহশালা বিষয়ে আমি অবগত আছি। সাম্প্রতিক একটা অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ এবং আমি পরিদর্শন করেছি। নি:সন্দেহে এটা একটা ভাল উদ্যোগ। সে অতীত ও বর্তমানের সাথে একটা যোগসূত্র স্থাপন করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তার এ ব্যতিক্রম উদ্যোগের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলব। আপাতত একটা নিদিষ্ট জায়গার ব্যাপারে আমরা চিন্তা ভাবনা করছি।