নির্ভুল সনদের অনৈতিক ব্যবসা জেনারেল হাসপাতালের রতনের

ইয়ানূর রহমান : যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ রতন সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টাকা ছাড়া পুলিশ কেসের রোগীর নির্ভুল সনদ দেন না তিনি।

রতন সরকার একই ব্যক্তি হয়ে দীর্ঘদিন ধরে জরুরি বিভাগ, স্টোর এবং ফার্মেসি- এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর এই তিনটি বিভাগের দায়িত্বে থেকে প্রতিমাসে অনৈতিকভাবে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।

নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তার ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসবে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ তার সহকর্মীরাই এসব অভিযোগ করছেন। অবশ্য, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রতন সরকার অস্বীকার করেছেন।

সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগে যেসব পুলিশ কেস রোগী ভর্তি হয়, তার অধিকাংশই ইচ্ছা করে নাম ভুল লেখা হয়। হত্যা ,আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, ছুরিকাঘাতের মতো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে রতন সরকারের পোয়াবারো। তিনি ইচ্ছে করে এসব রোগীর নাম বা ঠিকানা ভুল লিখে দেন। পরে বড় অংকের টাকা দিলে সংশোধন হয়, না দিলে হয় না।

যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুর এলাকার বাসিন্দা আকতারুজ্জামান বলেন, “গত ১৭ই জুলাই আমার ভাই ইন্তাজুল বাড়ির পাশে মাদক ব্যবসায় বাধা দেওয়ায়য় মাদক ব্যবসায়ীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। তার পেটের নাড়ি পর্যন্ত কেটে যায়। ওইদিন রাতেই তাকে ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় রেফার করেন। দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা নেওয়ায় সে জানে বেচে যায়। দুঃখের বিষয় হল-আমার ভাইয়ের নাম ইন্তাজুল বলার পরেও জরুরি বিভাগ থেকে কেন ইমদাদুল লেখা হল জানা নেই। নাম ঠিক করাতে জরুরি বিভাগের ইনচার্জ রতন সরকারের কাছে গেলে বিনাকারণে আমাকে কয়েকদিন ঘুরিয়েছেন। এরপর লোক মারফত কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছেন। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তিনি আমাকে পরিস্কার জানিয়ে দেন, ‘নাম সংশোধন হবে না। যা খুশি তাই করতে পারেন।’ পরে নাম সংশোধন করতে সুপার স্যারের কাছে আবেদন করলে তিনি লিখিত অনুমতি দেন। কিন্তু রতন সরকার আমাকে দিনের পর দিন ঘুরাচ্ছেন।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জরুরি বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী জানান, তার খুঁটির জোর কোথায়, জানি না। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিভাগের ইনচার্জ কীভাবে রয়েছেন-বলতে পারি না। তাদের আক্ষেপ, মনে হয় হাসপাতালের সুপার নয়, রতন সরকারের অধীনে চাকরি করি। রতন সরকার মাসে লাখ লাখ টাকার ওষুধ গোপনে বিক্রি করে দেন। আমাদের পরিবারের জন্য ওষুধ লাগলে- তা মেলে না।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার এম আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি একটি এমসি দেব তার নাম ইন্তাজুল নাকি ইমদাদুল? নাম, ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আমার কিছুই করার থাকে না।’
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার আহম্মেদ তাকে সামস বলেন, ‘আমার একটি এমসি দিতে নাম সংশোনের জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটো কপি জমা হয়েছে শুনেছি। রতন সরকার কাগজপত্র দিলে এমসি দিয়ে দেব।’

যোগাযোগ করা হলে রতন কুমার সরকার প্রথমে বক্তব্য দিতে চাননি। তিনি বলেন, ‘যা জানতে চান হাসপাতালের সুপারের কাছ থেকে জেনে নিন।’

পরে অবশ্য তিনি বলেন, ‘আমার যোগ্যতা আছে- তাই হাসপাতাল আমাকে তিনটি নয় দুইটি বিভাগের দায়িত্বে রেখেছে। এতে সাংবাদিকদের সমস্যা কী ?’

টাকা গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি কারোর কাছ থেকে টাকা নিই না।’

যশোর কোতোয়ালি থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, ‘আমরা পুলিশ হয়েও তার কাছে হয়রানির শিকার হয়েছি। সাধারণ মানুষের কী হতে পারে তা ভাবাই যায় না।’

জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এরকম ঘটনা আমার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এবং ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবুল কালম আজাদ লিটু বলেন, ‘রতন সরকার জরুরি বিভাগ ও ফার্মেসির ইনচার্জ। নির্ভরশীল লোক পেলে তাকে সরিয়ে দেয়া হবে।’
অর্থবাণিজ্যসহ দুর্নীতির সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান তিনি।