ফুলে ফুলে সেজেছে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন

// নাসিম উদ্দীন নাসিম
ফুলে ফুলে সেজেছে নাটোরের ‘উত্তরা গণভবন’। নতুন রূপে ফুলে ফুলে শোভিত প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন নাটোরের ‘উত্তরা গণভবন’ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজার হাজার দর্শনার্থী। গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, নয়নতারা, সিলভিয়া, জিনিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া ,জিনিয়া আর হলদে গাঁদা ফুলে ছেয়ে গেছে নাটোরের উত্তরা গণভবনের বাগান। এছাড়াও দেশ-বিদেশের বিরল প্রজাতির ফুলও ফুটেছে। যার মধ্যে-সাদা অ্যারামন্ডা, হোয়াইট পয়েন্সেটিয়া, পারিজাতসহ বাহারি প্রজাতির ফুল।
সবুজের বুকে লাল, নীল, হলুদ, সাদাসহ নানা প্রজাতির ফুল দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। ফুলের সুবাসে মুখরিত আর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত পুরো গণভবন চত্বর। আর ফুল থাকবে মৌমাছি-প্রজাপতি থাকবে না তা হয় না। সবমিলে অন্যরকম সৌন্দর্যের পসরা মেলেছে ‘উত্তরা গণভবন’।

গণভবনের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দুপাশের সারি সারি গাঁদা ফুল দর্শনার্থীদের বরণ
করছে। ফুলের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো গণভবন চত্বরে। সেই গন্ধে ফুলে ফুলে ঘুরছে মৌমাছি-প্রজাপতি।
কর্তৃপক্ষের দাবি, শীতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ বছর উত্তরা গণভবন চত্বর জুড়ে ২১ প্রজাতির ২৫ হাজার ফুল গাছের চারা রোপন করা হয়েছে ।
রাজশাহীর কলেজ ছাত্রী সিনথিয়া ইসলাম জানান, উত্তরা গণভবন আমার পচ্ছন্দের একটি পর্যটন স্থান। শীত মৌসুমে উত্তরা গণভবনে প্রচুর ফুলের গাছ রোপন করা হয়েছে। এতে করে গণভবনের
সৌন্দর্যকে কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
দর্শনার্থী খান মামুন বলেন, শীত মৌসুমে একবার করে গণভবনে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসি।
পুরো গণভবনে ফুলের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানকার ফুলগুলো অনেক সুন্দর। এসব ফুল
খুব কম দেখা যায়।
দেশি-বিদেশি অসংখ্য ফুল ও ফলের গাছগাছড়া, সুদীর্ঘ লেক, পুকুর, ইতালিয়ান গার্ডেন ও নয়নাভিরাম একাধিক ভবন নিয়ে উত্তরা গণভবন দর্শনার্থীদের বেড়ানোর জন্য বেশ পছন্দের জায়গা।
উত্তরা গণভবনের মূল প্যালেসের পাশের রানীমহল, র্গ্যান্ড মাদার মহলের পাশের অংশ ও ইতালিয়ান
গার্ডেনের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। এগুলোতে ফুটে আছে নানান রঙ ও বর্ণের
দৃষ্টিনন্দন ফুল। এর মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দুপাশের সারি সারি গাঁদা ফুল দর্শনার্থীদের অন্যরকম ভালোলাগার পরশ দিবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে প্রতিদিন গণভবনে ঘুরতে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে বাহারি রঙয়ের এসব ফুল। ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ফুলের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত
দর্শনার্থীরা। অনেকে প্রকৃতির প্রেমে পড়ে মন ভরে ঘ্রাণ নিচ্ছেন। শুধু বড়রা নয়, বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও ফুলের সঙ্গে আনন্দে মেতেছে।

জেলা প্রশাসক আবু নাসের ভূঁইয়া বলেন, উত্তরা গণভবনে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। তাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য উত্তরা গণভবনে ২১ প্রজাতির ২৫ হাজার ফুলের চারা রোপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুরো গণভবন ফুলে ফুলে সজ্জিত হয়ে উঠেছে। দর্শনার্থীদের আনন্দ দুগুণ বাড়িয়ে দেবে চমৎকার ফুলের বাগান। উত্তরা গণভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে ।

১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাটোর দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে উত্তরা গণভবন নামকরণ করেন। বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবনের মূল প্রাসাদের ভেতরে মন্ত্রীসভার বৈঠকও করেন। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে উত্তরা গণভবনে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক হয়েছিল।

নাটোর জেলা সদর থেকে প্রায় ১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার উত্তরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে
দিঘাপতিয়া গ্রামে উত্তরা গণভবনের অবস্থান। পুরোনো ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, ১৮০২ সালে রাজা রামজীবন ৪২ একর জমির ওপর রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিক¤েপ প্রাসাদটি ধ্বংস হলে ১৮৯৭ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ শিল্পীদের সহায়তায় দিঘাপতিয়া রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায় আজকের এই রাজপ্রাসাদটি নতুনভাবে নির্মাণ করেন।