বেনাপোল বন্দর কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালের ভারতীয় বিএসএফ’র বাঁধায়নির্মান কাজ বন্ধ

// ইয়ানূর রহমান : বেনাপোল স্থলবন্দর কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালের একাংশের নির্মান কাজ বন্ধ হয়েগেছে। গত ২৫ জানুয়ারি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র বাঁধার মুখে এ নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি নিরসনে
উর্দ্ধতন কর্তপক্ষসহ বিভিন্ন মহলে অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম। তবে, সেথেকে অদ্যবধি বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় এ সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক ও চাঁপা উত্তেচনা বিরাজ করছে।

জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি-২৪ তারিখে, বিএসএফ’র গুলিতে রইস উদ্দীন নামে এক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য নিহত হওয়ার পর থেকে যশোরের শার্শা উপজেলার এ সীমান্ত এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেথেকে বিএসএফ সদস্যরা বৈরি আচরণ করছে বাংলাদেশের এ সীমান্ত এলাকার মানুষের সাথে।

বেনাপোল স্থলবন্দর কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালের নির্মান শ্রমিকরা জানান, বন্দরের অধিগ্রহণকৃত নতুন ৪১ একর জমির মধ্যে ১৬ একর জমিতে ইয়ার্ড নির্মানের কাজ চলছিলো। হঠাৎ গত এক সপ্তাহ পূর্বে চলমান কাজে বাঁধা দেয়
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা। তারা হুমকি দিয়ে নির্মানাধীন সকল কাজ বন্ধ করে দেয় এবং বিভিন্ন নির্মান যন্ত্রসামগ্রী আটকে দেয়। পরে, ভারত সীমান্তের শুন্যরেখা থেকে ১৫০ গজ জায়গা ছেড়ে কাজ
করার নির্দেশনা দেয়। এক পর্যায়ে অসহায়ের মতো ১৫০ গজ জায়গা ছেড়ে লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ। তাতে, বেনাপোল বন্দর কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালের ৩৯ হাজার ৬২২ স্কয়ার মিটার ইয়ার্ড নির্মানের জায়গা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দরে স্থান সংকুলান হওয়ায় ২০২২ সালে ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেহিক্যাল টার্মিনালের নির্মান শুরু করে বাংলাদেশ সরকার এবং চলতি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। যার, এ পর্যন্ত নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬৫ শতাংশ।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত জটিলতা না কাটায় নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নকশা অনুযায়ী কাজ শেষ করা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বন্দর সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলের বিপরীতে অবস্থিত ভারতের পেট্রাপোল বন্দর। দু’দেশের ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ওই বন্দরের আধুনিকায়নে ভারত সরকার ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সীমান্ত
ঘেঁষে মাত্র ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে ১৫০ গজের মধ্যেই ৪২ একর জমিতে সংহত চেকপোষ্ট নির্মান কাজ শেষ করে। সেখানে বানিজ্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে শতাধীক সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। দু’দেশের আলোচনা স্বাপেক্ষে ৮ বছর পর ২০২২ সালে একই নিয়মে ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে বাংলাদেশ অংশে ৪১ একর জমিতে
কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালের নির্মান কাজ শুরু করে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
হঠাৎ ৪১ একরের মধ্যে ১৬ একর জমিতে ইয়ার্ড নির্মানের চলমান কাজে ভারতীয় বিএসএফ বাঁধা দেওয়ায় ১৫০ গজ জায়গা ছেড়ে কাজ করতে হলে এই টার্মিনালের ৩৯ হাজার ৬২২ স্কয়ার মিটার জায়গা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা ও নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করা নিয়ে বন্দর
কতৃপক্ষের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বেনাপোল কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল নির্মান কাজের সাব-ঠিকাদার মোজাম্মেল হোসেন জানান, ভারতের বিএসএফ সদস্যরা গুলি করার ভয় দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা নির্মান সামগ্রীও আটকে দিয়েছিলো।

বেনাপোল কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল নির্মানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস.এস.আর গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মন্নু বিশ্বাষ জানান, ভারত ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে পেট্রাপোল বন্দরের স্থাপনা নির্মান করেছে। আমরা পেট্রাপোল
বন্দরকে অবগত করে ১০ মিটার জায়গা ছেড়ে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিএসএফের বাঁধায় কাজ বন্ধ আছে। এতে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ করা ও নকশার কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, প্রতিবছর দু’দেশের বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানিমুখী বানিজ্য হয়ে থাকে। দুই দেশের বানিজ্য সম্প্রসারণে বন্দরের দু’পাশে উন্নয়ন কাজ হবে।
এখানে বাঁধা আসা দুঃখ জনক।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ভারত’ অবাধে বাংলাদেশ সীমান্তের মাত্র ১০ মিটারের মধ্যে তাদের নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে। সেখানে একই সীমান্ত রেখায় বাংলাদেশ’ ভারত সীমান্তের ১৫০ গজ ছেড়ে কাজ করতে হবে কেনো? এটি বিএসএফ’র অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বিএসএফের। দু’দেশের বন্দরের উন্নয়ন কাজের স্বার্থে চলমান সংকট নিরসনের আশা করেন তিনি। বলেন, চলমান সংকট নিরসনে ভারত’ অতিতের মতো বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের পরিচয় দিবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, বর্তমানে বিএসএফের বাঁধায় চলমান ১৬ একরের কাজ বন্ধ আছে। আইনী প্রক্রিয়ায় যাতে নির্মান কাজ শেষ করতে পারি তার সহযোগীতার জন্য বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠিতে অবগত করা হয়েছে।

বেনাপোলের সীমান্তবাসী জানান, বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ কাউকে যেতে দিচ্ছেনা। এতে বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা গ্রামবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।#