// সঞ্জু রায়, বগুড়া:
জোটের শরীক দলকে ছাড় দেওয়ার কারণে বগুড়ার তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। এর মধ্যে এক প্রার্থী নৌকা থেকে নির্বাচনের প্রত্যাশায় ছেড়ে দেন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ। আরেকজন পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে অব্যাহতি নেন।
ভোট আর জোটের সমীকরণে আসন দুটি ছেড়ে দিল আওয়ামী লীগ। ফলে নৌকা প্রতীকে আর ভোট করা হলো না তাদের। রইলো না তাদের আগের জনপ্রতিনিধির দায়িত্বও। রাজনীতির হিসাব-নিকাশের বেড়াজালে বগুড়া-২ আসনের তৌহিদুর রহমান মানিক আর বগুড়া-৩ আসনের সিরাজুল ইসলাম রাজুকে হারাতে হলো দু-কূলই।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। এদিন বগুড়ার ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তাদের মধ্যে মানিক ও রাজু রয়েছেন। এই দুজন বাদে আরও একজন প্রার্থীও নৌকার মাঝি থেকে ছিটকে গেছেন। তিনি বগুড়া-৪ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিক ছিলেন পৌরসভার মেয়র। জাতীয় নির্বাচনে ভোটের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলে নিয়ম অনুযায়ী তাকে ওই সময়ের দায়িত্বরত জনপ্রতিধির পদ ছাড়তে হবে। এই কারণে মানিক পৌরসভার মেয়র পদ থেকে নৌকার হয়ে ভোট করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এই আসনটি বরাদ্দ করা হয় জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর জন্য। এই আসনটি গত দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও জোটের শরীক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এই আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য রয়েছেন তিনি।
নৌকার প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খান রাজুকেও বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনের ভোট থেকে সরে যেতে হলো। তিনি আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন রাজু। নির্বাচনী বিধানের কারণে রাজুও উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু জোটের সমীকরণের এ প্রার্থীর আসনে নির্বাচন করবেন জাতীয় পার্টির মনোনীত নুরুল ইসলাম তালুকদার।
দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই আসনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজুর ভোট করার আর সুযোগ রইল না। জোটের দলীয় প্রার্থী হয়ে নুরুল ইসলাম তালুকদার ওই আসনে গত ১০ বছর ধরে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়াও বগুড়ার-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের নৌকার মনোনীত প্রার্থী ছিলেন হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। তিনি কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ ২২ বছর পরে এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় এলাকার ভোটাররা উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কিন্তু সেই উত্তাপে পানি ঢেলে দিল জোটের হিসাব-নিকাশ। তাকেও সরে যেতে হলে নির্বাচন থেকে।
কারণ জোটের আরেক শরীক জাসদের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনকে এই আসন ছেড়ে দিতে হয় আওয়ামী লীগকে। তিনিও বগুড়ার এই আসনে ২০১৪ সালে দশম নির্বাচনে জোটের বদৌলতে রাজ মুকুট পরে জাতীয় সংসদ সদস্য পদ লাভ করেন।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালে উপনির্বাচনে ফের জোটের সুবাদে সংসদ সদস্যের তকমা পান। তবে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ জনগণের জন্য কী করেছেন তার সমীকরণ ভিন্ন। এবার জাসদ থেকে তাকে মনোনীত করার পর নিজ দলেই তোপের মুখে পড়েন তিনি। নন্দীগ্রামে গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে সভা করে তানসেনকে নির্বাচনে বয়কটের ঘোষণা দেন দলের নেতাকর্মীরা।
সভা শেষে নন্দীগ্রাম উপজেলা জাসদ সভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হোক। কিন্তু আমাদের দলীয় প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনের পক্ষে এবার ভোট করব না। তার নীতি-নৈতিকতার খুব অভাব। তিনি বারবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এছাড়া জাসদ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেননি।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নৌকার তিন জন বাদে মনোনয়ন প্রত্যাহারের তালিকায় বগুড়ার ছয় আসনের জাকের পার্টির প্রার্থীরা রয়েছেন। তারা হলেন, বগুড়া-২ আসনের মো. আসগর আলী ফকির, বগুড়া-৩ আসনের মো. গোলাম মোস্তফা, বগুড়া-৪ আসনের আব্দুর রশিদ সরদার, বগুড়া-৫ আসনের মাছুম রানা ওয়াসীম, বগুড়া-৬ আসনের মোহাম্মদ ফয়সাল বিন শফিক ও বগুড়া-৭ আসনের মো. নাজির মাহমুদ রতন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বগুড়া-১ আসনের আব্দুর রহমান ও বগুড়া-৭ আসনের ফারুক আহমেদ নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
বগুড়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, রোববার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। এদিন মোট ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। এর মধ্যে নৌকার তিন জন।সোমবার প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার ৭টি আসনে বৈধভাবে প্রার্থী মনোনীত হয়েছিলেন মোট ৬৪ জন প্রার্থী। গত ৩ ও ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৬০ জনের। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন আরও ৪ জন প্রার্থী। বগুড়ার ৭টি আসনে বৈধ প্রার্থী মোট ৬৪ জন। এরমধ্যে গতকাল রবিবার ১১ জন প্রত্যাহার করে নেয়ায় মোট প্রার্থী দাঁড়িয়েছে ৫৩ জন।