নাটোরে চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থী,সব আসনে স্বতন্ত্র

নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্রভাবে লড়তে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নৌকার মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের বর্জনের ঘোষণার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর জেলায় জেলায় নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে প্রতিদন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। । এর ব্যতিক্রম নয় নাটোরে জেলাতেও।
নাটোর-০১ আসন লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত । এই আসনের মোট ৯ জন প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তবে এ আসনে ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে ২০১৪ সালের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বলে জানায় স্থানীয় ভোটাররা।এছাড়া লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক শামীম আহমেদ সাগর, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ স¤পাদক কাজল রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনিসুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।অপরদিকে আসনটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, জাতীয় পার্টির আশিক হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির লিয়াকত আলী ও স্বতন্ত্র জামাল উদ্দিন ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নাটোর-০২ আসন নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত । নাটোর-১ আসনের মতো এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছড়াছড়ি নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে। দুই বারের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ আহাদ আলী সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে এখানে।
এছাড়া আসনটিতে জাতীয় পার্টির নূরুনবী মৃধা, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির বজলুল রশিদ ও জাসদের শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


নাটোর-৩ আসন চলনবিল অধ্যাষিত সিংড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনটিতে ৩ বারের সংসদ সদস্য ও দুইবারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পলকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্য সিংড়া উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক। এই আসনটিতে স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালে প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়। পলকের আগে আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। তবে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২ জন প্রার্থী থাকার পরও দ্বিতীয়বারের মতো শফিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থী না থাকায় তাদের ভোটার শফিকের পক্ষে অবস্থান নিলে পলকের সঙ্গে শফিকের হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে বলে জানায় ভোটাররা।


শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন “আমি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনি ফরম নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে মনোনয়ন আমি পাইনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা মনোনয়ন পায়নি তারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। এরপরেই নাটোর ৩ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“এ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না আসায় একটা সংকট সামনে চলে এসেছে। এসব কাটাতে অতীতের মত এবারও সামনে এসেছি। একজন স্বচ্ছ মানুষ হিসেবে প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে আমি আশাবাদী, গভীরভাবে আশাবাদী। আমি জয়লাভ করব।”
এছাড়া আসনটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির মিজানুর রহমান, জাকের পার্টির রাকিবা হক, বাংলাদেশের তরিকত ফেডারেশনের (বিটিএফ) আলতাফ হোসেন, তৃণমূল বিএনপির আবুল কালাম আজাদ, বিকল্প ধারার আনোয়ার হোসেন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আমিরুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


নাটোর ৪ বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর উপজেলা নিয়ে এই আসন। আসনটি গত অক্টোবরে উপ-নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীকে এবারও মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে আসনটিতে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক বড়াইগ্রাম উপজেলা। বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার মেয়র জাকির হোসেনের মা জাহানারা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া এই আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (চলতি বছরের আগস্টে মারা যান) প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আসিব আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।এছাড়া এ আসনে স্বতন্ত্র হিসাবে গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি আলাউদ্দিন মৃধা, জাকের পার্টির রবিউল করিম, তৃণমূল বিএনপির আব্দুল খালেক সরকার, বিএনএমের গাজী আবু সায়েম রতন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের শান্তি রিবারু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্থানীয় ভোটাররা জানান, এই ৩ প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না থাকায় তাদের ভোটারদের ভোট নেয়ার চেষ্টায় আছেন প্রার্থীরা। গত সপ্তাহে গুরুদাসপুরে ২ শতাধিক বিএনপি কর্মীকে আওয়ামী লীগে যোগদান করান বর্তমান সংসদ সদস্য।