// রানা আহম্মেদ অভি, ইবি।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গঠিত তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দের দাবিতে অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১২ টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন তারা। রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মুঠোফোনের আশ্বাসে ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অনশন স্থগিত করলেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আবেদন করে অর্থ না পাওয়া অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী। তাঁদের দাবি, ‘নিজের টাকায় বাঁচতে চাই।’ জানা যায়, ইতোপূর্বে কয়েকবার আবেদন করেও সহায়তা পাননি চন্দন সাহা ও জহুরুল ইসলাম নামের অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী। এর মধ্যে চন্দনের মেরুদন্ড ভেঙে শরীরের নিচের অংশ অচল। তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে হুইল চেয়ারে বসে অনশন করেন। অন্যদিকে জহুরুলের চোখ টিউমারে আক্রান্ত। দুজনই চিকিৎসার জন্য আবেদন করলেও এই ফান্ড কোনো বরাদ্দ পাননি। তাই তারা অনশনে বসেছেন। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নেন। শুরুতে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিলেও বিকেল চারটায় সেখান থেকে প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে অবস্থান নেন এসব শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ তাঁদের সঙ্গে কথা বললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের উপস্থিতিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম দুরারোগ্যে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে আগামীকাল বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সাথে কথা বলা হবে বলে আশ্বাস করেন তিনি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন। প্রসঙ্গত বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ‘ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য ফ্যাটাল ডিজিজ রিকভারি ফান্ডে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর থেকে বছরে দুইশ করে টাকা নেয়। ২০১৭-১৮ ও ২০১৮- ১৯ শিক্ষাবর্ষের দুই হাজার ৭৭৫ শিক্ষার্থী থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তিন বছরে জমা হয়েছে ৩৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দুই হাজার ৪৩৪ শিক্ষার্থী থেকে ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দুই হাজার ৫০৪ শিক্ষার্থী থেকে ৫ লাখ ৮০০ টাকা জমা হয়েছে। এতে এই চার শিক্ষাবর্ষ থেকে মোট জমা হয়েছে ৪৮ লাখ চার হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া জানুয়ারির পর আরও ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬০০ টাকা জমা হয়েছে। ওই চার শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে মোট জমা হয় ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের ৩০ জুন অগ্রণী ব্যাংক ইবি শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট (হিসাব নম্বর-১৩৭৭৫) খোলা হলেও আনুমানিক হিসেবে মাত্র ৯ লাখ ৯ হাজার ৬৬০ টাকা সেই অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বাকি ৫৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকার কোনো হদিস নেই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর দুইশত টাকা করে এই ফান্ডে প্রদান করলেও কর্তৃপক্ষের সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছেন না। বিভিন্ন বিভাগের আট শিক্ষার্থী অন্তত ছয়মাস আগে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও নানা জটিলতায় তারা অর্থ বরাদ্দ পাননি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ফ্যাটাল ডিজিজের নীতিমালা সংক্রান্ত বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। এজন্য নীতিমালা সংশোধনের জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘দুরারোধ্য আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা দুপুর থেকে অনশন করছে। বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে কথা বলা হয়। তিনি বলেছেন মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উপাচার্যের আমলে আছে। খুব দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের এই আশ্বাসে অনশন স্থগিত করেছে। আশা করছি খুব দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে।’ এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি অনাশনে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় বিষয়টি নিয়ে কথা হবে।’ |