তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে 

// লালমনিরহাট প্রতিনিধি।

লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে তিস্তা নদীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ পানির গতি বৃদ্ধির কারণে জনগণের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আর লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পানিবাহি নানা রোগব্যাধি।

বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকাল ৫টা থেকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২দশমিক ৩০মিটার। যা (বিপদসীমা ৫২দশমিক ১৫সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ১৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও বিকাল ৪টার পর থেকেই বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ এবার আরও একটি বন্যার আশঙ্কা করছেন। তবে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উত্তর সিকিম এ তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ ভারতের গজলডোবা পয়েন্টে পানিসমতল বিগত মধ্যরাত হতে আজ সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে স্থিতিশীল আছে (বর্তমান পানি সমতল ১১০.২০ মি.)। তিস্তা নদী দোমুহুনী পয়েন্টে অদ্য ভোর হতে প্রায় ১১২ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে (বর্তমান পানি সমতল ৮৫.৪০ মি.)।

ডালিয়া পয়েন্টে পানিসমতল আজ রাত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫০ সে.মি. উপর পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারি জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এরপর মধ্যরাত পর্যন্ত কিছুটা হ্রাস পেয়ে পরবর্তীতে পুনঃরায় পানিসমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

ইতিপূর্বে পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো নিরাপদ স্থানে অবস্থানের জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ বেড়েছে বলে দাবি করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানির প্রবাহ বেড়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে। তবে ভারতে পানির প্রবাহ কমে গেলে তিস্তার পানি কমবে বলে গণমাধ্যমকে বলেন।

এদিকে ধরলা, রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, চাতলা, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বর নদীতে বন্যার পানিও বাড়তে শুরু করেছে।

এছাড়াও লাগাতার বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে ডুবছে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট।