// ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি-
পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরজুড়ে বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব। বর্ষায় পানি হওয়ায় চরাঞ্চলের ঘরের আশপাশে, রাস্তাঘাটে ও ফসলের মাঠে রাসেল ভাইপার বেশি দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে উপজেলার বিভিন্ন চরে রাসেল ভাইপারের দংশনের শিকার হয়েছেন অন্তত সাতজন। তাদের মধ্যে পাঁচজন সুস্থ হয়েছেন।
বাকি দুজন মারা গেছেন। সাপের কামরে আক্রান্তরা চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চরভদ্রাসন সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের কামারডাঙ্গী গ্রামের অমৃত মণ্ডলের স্ত্রী বেদেনা রানী রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।’
সর্বশেষ রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে নিহত বেদেনা মণ্ডলের স্বামী অমৃত মণ্ডল বলেন, ‘আমি ১৮ আগস্ট (শুক্রবার) ধানক্ষেতে কাজ করছিলাম।
আমার স্ত্রী বিকেল ৪টার দিকে আমার জন্য ভাত নিয়ে ক্ষেতের মাঝের রাস্তা দিয়ে আসার সময় সাপে কামড় দেয়। পরে আমরা স্থানীয় এক ওঝা দিয়ে বিষ নামিয়ে বাড়ি চলে আসি। বাড়িতে আসার এক ঘণ্টা পর আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার আমরা ওঝার কাছে চিকিৎসা নিতে যাই।’
তিনি বলেন, দ্বিতীয় দফায় বিষ নামানোর পরও বেদেনার কোনো পরিবর্তন না হলে তারা চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে নেওয়ার পর বেদেনা কিছুটা সুস্থ বোধ করেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। পরের দিন সকাল ১০টার দিকে তার আবার বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকরা অ্যান্টিভেনাম প্রদান করেন এবং তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ২৩ আগস্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক দিন চিকিৎসার পর তার মৃত্যু ঘটে। এখানে যে চিকিৎসক ছিলেন তিনি বলেছেন, কিডনিজনিত সমস্যায় তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে বন্যার পানির সঙ্গে রাসেল ভাইপার সাপ ভেসে এসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চরাঞ্চল ছেয়ে যায়। এরপর সাপগুলো উপজেলাজুড়ে বংশ বৃদ্ধি করে। এ বছর উপজেলার কৃষক, শ্রমিক ও মজুররা ফসলি মাঠে কাজ করতে গিয়ে বেশি সাপের দংশনের শিকার হচ্ছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি সাপে কাটায় মারা যান উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আমিনখারডাঙ্গী গ্রামের ময়নাল শেখের ছেলে লাবলু শেখ (৩৫)। আর সাপের কামড়ের পর ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরকল্যাণপুর গ্রামের আফাজদ্দিন শেখের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (২২), একই গ্রামের শফি মুন্সীর ছেলে শাহাবুদ্দিন মুন্সী (২৫), তার মেয়ে স্বর্ণা আক্তার (১৮), চরহরিরামপুর ইউনিয়নের একরাম মাতুব্বরডাঙ্গী গ্রামের শেখ বাদশার ছেলে শেখ ইউনুচ (৩০) ও শালেপুর গ্রামের জয়নাল ফকিরসহ (৩৮) অনেকে।
এ বিষয়ে উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে এ বছর সাপের উপদ্রব ও ডেঙ্গু মশা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই যদি সহায়তা করে আমি রাসেল ভাইপার সাপ ও ডেঙ্গু মশা নিধন করতে সক্ষম হব।’
উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বেপারী বলেন, ‘এ বছর বর্ষার পানি বেশি হওয়ায় চরাঞ্চলে বেশি সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। রাসেল ভাইপার মূলত পাহাড়ি সাপ। আমাদের সাপের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এই অবস্থা প্রতিরোধ করতে চরাঞ্চলবাসীর মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রচুর সাপের কামড়ের প্রতিষেধক ইনজেকশন রয়েছে। ইতিমধ্যে সাপে কাটা রোগীদের প্রতিষেধক ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনো ওঝা ও কবিরাজি চিকিৎসায় বিশ্বাসী কিছু লোক গাফিলতির কারণে ইনজেকশন নিচ্ছে না।’