// সঞ্জু রায়, বগুড়াঃ বগুড়ার কাহালুতে নিখোঁজের আড়াই মাস পর বিধান চন্দ্র সরকার (২০) নামের এক কীত্তর্নীয়ার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার শিবাকলমা গ্রামের ভাদাখালের আবাদি জমিতে মাটি চাপা দেওয়া গলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার বিধান শিবাকলমা গ্রামের অনীল চন্দ্র সরকারের ছেলে । এদিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়া সদর ও কাহালু থানায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ যারা প্রত্যেককেই নিহতের প্রতিবেশি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বিদু চন্দ্রের ছেলে বিপুল চন্দ্র প্রাং (৩৫), জিতেন চন্দ্রের ছেলে দিনেশ চন্দ্র (৪১) ও যুক্তবাবু চন্দ্রের ছেলে উৎপল চন্দ্র (২৪)।
শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের দেখানো স্থান হতে বিধানের লাশ উদ্ধার শেষে সাংবাদিকদের দেয়া ব্রিফিং এর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আখতার পিপিএম জানান, গত ১১ই এপ্রিল নিখোঁজ হয় হত্যাকাণ্ডের শিকার বিধান। পরেরদিন বিধানের বাবা অনীল চন্দ্র কাহালু থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। এরপর প্রায় দেড় মাস পরে গত পহেলা জুন অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিরা তার বাবার কাছে মুঠোফোনে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে বিধানকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। বিষয়টি বিধানের বাবা অনীল চন্দ্র পুলিশকে অবগত করলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মুক্তিপণ চাওয়া ব্যক্তিদের শনাক্তে কাজ শুরু হয়। পরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বগুড়া ডিবি পুলিশ সদর ও কাহালু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের এই কর্মকতার্ আরো জানান, গ্রেপ্তার তিনজন নিহত বিধানের প্রতিবেশি। ১১ এপ্রিল তারা অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্য বিধানকে নিয়ে শিবাকলমা গ্রামের ভাদাখালতে গিয়ে মদপান করে। একপর্যায়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিধানকে অজ্ঞান করতে গ্রেপ্তার দীনেশ হাতুড়ি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে। এই সময় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হলে, গ্রেপ্তারকৃতরা হাতুড়ি দিয়ে উপর্যপুরি মাথায় আঘাত করে বিধানের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে সেখানেই বিধানের মরদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয়। এর প্রায় ৫ দিন পর গ্রেপ্তারকৃতরা বিধানের মরদেহ বের করে পাশের একটি আবাদি জমিতে নিয়ে গিয়ে ভালোভাবে মাটিচাপা দেয়। ঘটনার প্রায় দুইমাস পরেও কেউ কিছু বুঝতে না পারায় গ্রেপ্তাররা বিধানের বাবা অনীল চন্দ্রের কাছে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করে।
স্নিগ্ধ আখতার জানান, গ্রেপ্তার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের থেকে মুক্তিপণ দাবির কাছে ব্যবহৃত মুঠোফোন ও সিমকার্ডটি উদ্ধার করা হয়েছে। তারপরেও উদ্ধারকৃত লাশটির ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি। লাশ উত্তোলন ও হত্যার রহস্য উন্মোচন সংক্রান্ত ব্রিফিংকালে এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ, বগুড়া কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদ হাসান, জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহ প্রমুখ।
লোকজ সংস্কৃতি বিকাশে বাবার হাত ধরে ছোট থেকেই হত্যাকাণ্ডের শিকার বিধান ঘুরে বেড়াতো গ্রাম থেকে গ্রামে। কীর্তনের মাধ্যমে মন জয় করে নিয়েছিলো হাজারো মানুষের তাইতো তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো শিবা কলমা গ্রামে আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ। ছেলে তো আর ফিরবে না কিন্তু দোষীদের উপর্যুক্ত বিচার যেন হয় এমনটাই দাবি এখন সকলের।