নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরের দত্তপাড়ায় হাটের সরকারী জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধেস্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়েছেন নাটোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। মঙ্গলবার সকালে বিষযটি নিশ্চিত করেছেন নাটোরের পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিশেষ পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। তদন্তকাজে সহযোগীতা করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৪ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আব্দুল মজিদ জানায়, নাটোর সদর উপজেলার দত্তপাড়া বাজারে প্রতিদিন নিজেদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করেন কৃষকরা। বাজারের নির্ধারিত জায়গা প্রভাবশালিরা দখল করে রাখায় নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। রাস্তার পাশে বাজার হওয়ায় দূর্ঘটনার শঙ্কায় থাকেন ক্রেতা বিক্রেতারা। এই সংবাদটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হলে তা আদালতের নজরে আসে। সংবাদটি বিশ্লেষণ করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সরকারি জমিতে অনুমতি ব্যতিত স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা। যা ‘দ্য গর্ভরমেন্ট এন্ড লোকাল অথারিটি ল্যান্ড এন্ড বিল্ডিং ১৯৭০ এর ৭ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গত ৬ জানুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেটের সেই আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, এই অপরাধ কার কার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তাদের বিস্তারিত নাম ঠিকানা প্রাথমিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরুপন ও সনাক্ত করা প্রয়োজন। তদন্তকালে আসামীদের সনাক্তকরণ, সাক্ষিদের জবানবন্দি গ্রহণ, স্থাপনার স্থিরচিত্র, ভিডিওসহ ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র প্রস্তুত, সংশ্লিষ্ঠ সমস্ত কাগজাদি জব্দ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
হাট কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান জানান, দত্তপাড়া হাটের নির্ধারিত জায়গায় হুসেন মিয়া, মোতালেব, শরৎ, নুর আলম পাকা দোকান করে দখল করে রেখেছে। এক একজনের একাধিক পাকা দোকান ঘর রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন জায়গা দখল করে অযথাই পরিত্যাক্ত করে ফেলে রেখেছে। তারা নিজেও ব্যবসা করেন না। অন্যদেরও বসতে দেননা। দ্রুত প্রশাসন যদি এইসব জায়গা দখলমুক্ত করে দেন তাহলে সবাই সুন্দরভাবে পণ্য কেনাবেচা করতে পারবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করার পর দখলদার উচ্ছেদে নোটিশও দেয়া হয়। কিন্তু দলখদাররা দখল না ছেড়ে নিজেদের স্থাপনা রক্ষায় নানা অপতৎপরতা শুরু করে। দ্রুত বাজারের জায়গা দখলমুক্ত করার দাবী জানান তিনি। জনস্বার্থের বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
দখলদার মোতালেব মিয়া জানান, নিয়মিত এখানকার পজিশন কেনাবেচা হয়। তিনিও জায়গা কিনে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। আরেক দখলদার নূর আলম জানান, আজ থেকে ৫০ বছর আগে তার বাবা গণি শিকদার ছাদ ঢালাই করে তিন রুম বিশিষ্ট দোকানঘর করেছিল। বাবা মারা যাবার পর তিনি সারের ব্যবসা করছেন। সরকারি জায়গায় দোকান থাকলেও এর বৈধতা সম্পর্কে জানেন না বলে জানান তিনি। আদালতের আদেশ নির্দেশ সম্পর্কেও তারা অবগত নন বলে জানান।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, আমাদের দত্তপাড়ায় একটি হাট রয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে কেউ কেউ হাটের জায়গা দখল করে রেখেছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যারা স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। সেই সাথে যারা সাধারণ ব্যবসায়ী তারা যাতে নিবিগ্নে ব্যবসা করতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছি। হাট কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে অবৈধ দখলকারীদের বাণিজ্যিক অবকাঠামো সনাক্ত করেছেন জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে উচ্ছেদ নোটিশও দেয়া হয়েছে। নিজ থেকে তারা সরে না গেলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের উচ্ছেদ করা হবে।
পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নাটোরের বিশেষ পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ জানান, দত্তপাড়া বাজারের অবৈধ দখলদারিত্বের বিষয়ে আদেশের কপি হাতে পেয়ে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্তকাজে সহযোগীতা করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।