যানজটের কারণে রাজধানীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নগরবাসীর পোহাতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণা। সেই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখাচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প। দরজায় কড়া নাড়ছে স্বপ্নের এই মেট্রোরেল। আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন। প্রকল্পের অবকাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছুই তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে। ব্যবহার করা হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি।
এর ব্যবহারকারীদেরও মেনে চলতে হবে কিছু নিয়মকানুন। স্টেশনের মেইন প্ল্যাটফরম, কনকোর্স লেভেল ও ট্রেন—সবখানেই যাত্রীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। মেনে চলতে হবে নির্দেশিকা। নইলে নিয়ম ভঙের অপরাধে পড়তে হবে শাস্তির মুখে।
যাত্রী চলাচলের জন্য ১০টি ট্রেন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিদ্যুতে চলা এই রেলে থাকছে ব্যাটারির ব্যাক আপ। যেটাকে বলা হচ্ছে এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম। কোনো কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হলে, তখন ট্রেনটিকে পরের স্টেশন পর্যন্ত টেনে নেবে এই ব্যাটারির শক্তি। এই প্রযুক্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বলছেন নির্মাতা জাপানি প্রকৌশলীরা।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেল হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম যোগাযোগ প্রকল্প। তিন ধাপে ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে কমলাপুর পর্যন্ত সম্পূর্ণ মেট্রোরেল।
মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে পোষাপ্রাণী বহন করা যাবে না। বিপজ্জনক কোনো বস্তুও বহন করা যাবে না। ট্রেন বা স্টেশনের কোথাও ফেলা যাবে না পানের পিক বা থুতু। প্ল্যাটফরম ও ট্রেনে খাবার খাওয়া ও যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না। ফোনের লাউড স্পিকার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বৃহদাকার ও ভারী মালপত্র বহন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত বারবার ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে তবে তাকে সরাসরি ডিটেনশন রুমে রেখে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়া ট্রেন দেখার জন্য প্ল্যাটফরমের স্ক্রিন ডোরে (প্ল্যাটফরমে দাঁড়ানো যাত্রীর দুর্ঘটনা ঠেকাতে বিশেষ দরজা) ঝুঁকতে নিষেধ করা হয়েছে। ট্রেনের দরজায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেও নিষেধ করা হয়েছে। ট্রেনের ভেতর একাধিক আসন দখলে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য নির্ধারিত হলুদ ট্যাকটাইল (বিশেষ ধরনের হলুদ টাইলস) পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি কিছু পরামর্শও দিয়েছে মেট্রোলরেল কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্বে পালনে সহায়তা করা, সহযাত্রীকে প্রয়োজনে সহায়তা প্রদান করা, মনোযোগ দিয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা শোনা, সর্বক্ষেত্রে ভদ্রতা ও সৌজন্য বজায় রাখা এবং নিজ গন্তব্য সম্পর্কে তথ্য পেতে মেট্রো ম্যাপের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ডিএমটিসিএল।
মেট্রোরেলের সম্পদ বিনষ্টকারী বা নির্দেশিকা অমান্যকারী যাত্রীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএল ম্যানেজার (সিভিল অ্যান্ড পি-ওয়ে) মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, আমরা মেট্রোরেলে চড়ে অভ্যস্ত নই। তাই প্রথমদিকে আমরা মানুষকে কাউনসেলিং করব। এ জন্য আমাদের প্রতিটি স্টেশনের কনকোর্স লেভেলে ডিটেনশন রুম আছে।
তিনি আরো বলেন, প্রথমদিকে মানুষজন ভুল করবে। ভুলের অবশ্য মাত্রাও আছে। কেউ ইচ্ছাকৃত ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আমরা আটক করে ডিটেনশন রুমে রাখব। সেখানে তাদের আমরা কাউন্সেলিং করব। যদি দেখা যায়, কাউন্সেলিংয়ে সন্তোষজনক ফল আসে তাহলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে। ডিটেনশন রুমের দায়িত্বে থাকবে মেট্রোরেলের নিজস্ব পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। আমরা প্রথমেই কাউকে বড় শাস্তি দেব না। স্টেশন এবং ট্রেন সার্বক্ষণিক সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া সার্ভিলেন্স টিম থাকবে। তারা দেখবে কে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করছে, কে ভুলবশত করছে। যদি কেউ ইচ্ছাকৃত বারবার ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে তবে তাকে সরাসরি ডিটেনশন রুমে রেখে পুলিশে দিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রুটে মেট্রোরেল যাত্রা শুরু করবে। যাত্রী পরিবহন শুরু হতে যাচ্ছে, তবে এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ ইউনিট। ৩৫৭ জন সদস্য নিয়ে পুলিশের বিশেষ ইউনিট হিসেবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নামে নতুন একটি ইউনিট চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ার আগ পর্যন্ত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ সদস্য নিয়ে নিরাপত্তার কাজটি চালাবেন বলে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেলে ৯টি স্টেশন থাকবে। এসব স্টেশনে এমআরটি পুলিশ নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবে বলে এমআরটি।
এ ব্যাপারে মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিকী জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া পুলিশ সদস্যরা গত মঙ্গলবার সকাল থেকে মেট্রোরেলের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োজিত রয়েছেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ওএনএফ) ফারুক হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত মেট্রোরেল পুলিশ নামে নতুন ইউনিটের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি সচিব কমিটিতে রয়েছে। সেখানে পর্যালোচনা চলছে। অনুমোদন পাওয়ার পর মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় মেট্রোরেল পুলিশ কার্যক্রম শুরু করবে।