সোশাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যথাযথ জবাব দিতে ছাত্রলীগ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে উল্লেখ করে তারল্য নিয়ে কোনও গুজবে কান না দিতেও তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল দেশ হওয়ার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনুরোধ করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছিলাম বলে ঘর ভরে গেছে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এর উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জবাবটা বেশি কিছু না। ওরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে যেটা লেখে তার জবাবে ওদের অপকর্মটা যদি কমেন্টে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলেই ওরা ওটা বন্ধ করে দেবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো। ওরা যা বলবে বিএনপি ক্ষমতায় থেকে কী করেছে, তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের খুন, কাকে কাকে মেরেছে, তাদের ভোট চুরি, ডাকাতি- এগুলো তুলে দিলেই যথেষ্ট। আমার মনে হয় ছাত্রলীগ এই কাজটা করতে পারবে।’
জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়তে যে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই সেই সোনার মানুষ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকে টাকা নাই বলে কিছু গুজব ছড়ানো হচ্ছে। টাকা নেই বলে অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো। তারা চুরি করে খেতে পারবে। সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কেউ কেউ। এদের সঙ্গে চোরের সখ্য রয়েছে কিনা সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা কথা বলে মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়। একটা শ্রেণি আছে তারা এটা করবেই আমি জানি। কারণ, মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, আর সেটাকেই আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায় তারা। কাজেই এদিকে সবার বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, তার সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছে। জাতির পিতার এই বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তিনি। তাদের বৃত্তান্ত দিলে সরকার তাদের পুনর্বাসন করবে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা
ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতাকর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে সারা দেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকাকালেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-২০১৪ সালে প্রায় তিন হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। বাস-লঞ্চ-রেল কোনও কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
তিনি বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট’। এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।
সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে লেখাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়া শিখে দেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে, যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতাকর্মী তারা সেভাবে গড়ে উঠবে যে এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে। খুনি, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন কোনোদিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। সেভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যে যাই করুক না কেন, লেখাপড়াটা শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কাজ করতে গেলে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবশক্তি দরকার। কাজেই আমাদের এই যুব সমাজ যারা আমাদের ভবিষ্যৎ, তারাই আমার ২০৪১-এ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। তাদের আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তারা প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে এবং আমাদের আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই, যারা মেধাবী তাদেরও জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যেমন নিজেদের করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার দরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার, আবার সেভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের শিক্ষার দরকার রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন আমরা হারিয়েছি আপনজনদের। বাংলাদেশ হারিয়েছিল তার উন্নয়নের সব সম্ভাবনা। খুনিদের বানিয়েছিল সারা বিশ্বের প্রতিনিধি। তাদের যোগ্যতা কী? জাতির পিতার খুনি।
শেখ হাসিনা জাতির পিতার বক্তব্য ‘আমাদের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস’ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে শহীদদের তালিকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীই বেশি। প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই আশাই করি।’
প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ছাত্রলীগ কাউন্সিল উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ও বিসিএল কমিউনিটি অ্যাপ উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দফতর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি যথাক্রমে কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করেন। নিহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। প্রায় সাড়ে চার বছর পর এবারের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সূত্র: বাসস।