ইসলামী নীতি নৈতিকতা বিরোধী শিক্ষা কারিকুলামের সংশোধন চাই -ছারছীনার পীর ছাহেব

ছারছীনা থেকে মোঃ আবদুর রহমান : পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ছারছীনা দরবার শরীফের ১৩২তম বার্ষিক ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলে গতকাল বাদ জোহর আখেরী মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। আখেরী মুনাজাতপূর্ব আলোচনায় হযরত পীর ছাহেব কেবলা বলেন -আমরা মুসলমান। মুসলমানদের স্বকীয় তাহযীব তমদ্দুন রয়েছে। তাই মুসলমানদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন হবে ইসলামী নীতি ও নৈতিকতার আদর্শে উজ্জীবিত। প্রসঙ্গ ক্রমে ২০২৩খ্রি. সন হতে স্কুল ও মাদরাসায় সমভাবে চালু হতে যাওয়া শিক্ষা কারিকুলাম সম্মন্ধে হযরত পীর ছাহেব কেবলা বলেন- ইতিমধ্যে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য নতুন কারিকুলামের আলোকে রচিত বই দেখে আমরা হতাশ হয়েছি। নব্বই ভাগ মুসলমানদের দেশে জনগনের অর্থে ও স্বার্থে সরকারী ভাবে রচিত বইতে ইসলাম ও মুসলামাদের নীতি-নৈতিকতা , তাহযীব-তমদ্দুন এবং আদর্শ-ঐতিহ্য চরম ভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে বিজাতীয় ভাবধারা এবং শিল্প-সংস্কৃতিকে হাইলাইট করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধর্মহীন করার হীন চক্রান্ত লক্ষ্য করা গেছে। আমরা এসব বইয়ের উপযুক্ত সংশোধন দাবী করছি।

আখেরী মুনাজাত পূর্ব আরোচনায় হযরত পীর ছাহেব কেবলার বড় ছাহেবজাদা ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছার উদ্দিন আহমদ হুসাইন বলেন- বর্তমান সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যথা- ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাষ্টার্সের মান প্রদান, মাদরাসা শিক্ষকদের চাকুরী ও বেতন বৈষম্য দূরীকরণ অন্যতম। ইতোপূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারও ইসলামের জন্য অনেক খেদমত করেছিলেন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, তাবলীগ জামাতের জন্য টঙ্গীর ময়াদান বরাদ্দ দেয়া, মদ-জুয়া নিষিদ্ধকরণ অন্যতম। তাদের এ অবদান ম্লান করার জন্য একটি কুচক্রি মহল ইসলাম বিরোধী কারিকুলামকে দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে লিপ্ত আছে। আমরা পূর্ব হতে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে অত্র কারিকুলামের আলোকে রচিত বইগুলি সংশোধনের প্রস্তাব করছি। আশাকরি সরকারের বোধদয় হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মাননীয় মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী এ্যডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম বৃহস্পতিবার দুপুর বারটায় দরবার শরীফে উপস্থিত হয়ে আখেরী মুনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি আগত মুসল্লীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন- লক্ষ লক্ষ লোকের এ মিলন মেলায় পানি ও সেনিটেশন এর প্রকট সমস্যা আছে। ইতোমধ্যেই স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি প্রকল্প পাশ হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে আপনাদের পানি ও সেনিটেশনের দুর্ভোগ লাঘব হবে ইনশা আল্লাহ।

মাহফিলে অন্যান্যদের মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ. কে.এম. এ.আউয়াল, আমিন মোহাম্মাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এ. এম. এম. এনামুল হক, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারূক, স্বরূপকাঠী পৌর মেয়র গোলাম কবির, নেছারাবাদ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুহিদুল ইসলাম মুহিদ, নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব উল্লাহ্ মজুমদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

আখেরী মুনাজাতে লাখো জনতার আমিন আমিন ধ্বনিতে আকাশ বাতাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। সমবেত জনতা তাদের বিগত জীবনের গোনাহ্ রাশি স্মরণ করে চোখে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। জনতার ক্রন্দন রোলে কিছুক্ষণের জন্য সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। হযরত পীর ছাহেব কেবলা সকলের কল্যান কামনা, ইসলাম ও মুসলমানদের ইজ্জত আব্রুর হেফাজত এবং দেশের শান্তি , শৃংখলা ও উন্নতি কামনা করে বারে গাহে এলাহীতে মুনাজাত করেন।