পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি এবং তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে তাদের গ্রেফতারে সারা দেশে একাধিক অভিযান চালিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা। পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অপরাধের ধরন পর্যালোচনা করছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি কারাগারে থাকা জঙ্গিদের জন্য নানা ধরনের ফাঁদ পেতেছেন গোয়েন্দারা। কারাগারে কড়াকড়ি আরোপ না করে যেসব জঙ্গি মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তাদের আরো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এসব ফোনের মাধ্যমে কাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন, সেই নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এদিকে জঙ্গিদের ডান্ডাবেড়ি পরাতে কারাগারে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি গ্রুপ শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্তের দিকে গেছে। তবে তারা এখনো সীমান্ত পাড়ি দিতে পারেনি বলেই মনে করছেন তারা। পুরো সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে খুব বেশি দিন তারা পালিয়ে থাকতে পারবে না। ঐ এলাকায় পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে।
ঐ কর্মকর্তা বলেন, তাদের অবস্থানের খুব বেশি তথ্য আমাদের কাছে নেই। ফলে আমরা নানা ধরনের ফাঁদ পেতেছি। কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দারা কারাগারে থাকা জঙ্গিদের জন্য যে ফাঁদ পেতেছে, তাতে জেলখানায় তাদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে। তারা আসলে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সেটা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অপারেশনের নেতৃত্ব দেওয়া মশিউর রহমানকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তার সম্ভাব্য অবস্থা নিয়েও কাজ করছেন গোয়েন্দাদের একাধিক টিম।
এদিকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর, সাজাপ্রাপ্ত বা একাধিক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আদালতে হাজির করার সময় ডান্ডাবেড়ি পরানোর বিষয়ে কারা সদরদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগ পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠিয়েছে। গতকাল ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, কোর্টে হাজিরের সময় গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের ডান্ডাবেড়ি না পরানোর কারণে এরই মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। গতকাল সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করে কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নন), অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৮ জন জঙ্গিসহ বন্দি ৩৩ জঙ্গি কড়া পাহারায় রয়েছে। এ জঙ্গিদের মধ্যে ২০০৭ সালে এ কারাগারের প্রাচীর টপকে পালিয়ে যাওয়া ভয়ংকর জঙ্গি মঈন খান ওরফে রঙ্গিলা ওরফে সোহেল ওরফে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ ওরফে রমিজ উদ্দিন ওরফে শামীমও রয়েছেন। এছাড়া কারাগার থেকে আদালতে আসামিদের আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ঢাকা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি সীমান্ত অতিক্রম করে যেন ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য জেলা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জেলার ভারত সীমান্তবর্তী থানা এলাকাগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।