পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় বিলে অবৈধ বাঁশের বানার বাঁধ তৈরি করে নিষিদ্ধ সোঁতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা। বন্ধ করে রাখা হয়েছে সুইচ গেটও। এতে বেশ কয়েকটি বড় বড় বিলের পানি আটকা পড়েছে। ফলে সময়মত ফসল আবাদে যেতে না পারায় বিপাকে পড়ছেন এসব বিলের হাজারো কৃষক। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় সুইচ গেটের কর্মচারীকে মারধরও করার অভিযোগ উঠেছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রশাসনের কাছে গোপনে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েও কোনও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার হাদল ও ফরিদপুর ইউনিয়নের খাগরবাড়িয়ার বিলের জলমহল ইজারা নেন স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর হোসেন। জাহাঙ্গীরের নামে হলেও এর মূলে বনয়ারীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া জড়িত। ইজারাকৃত জলমহলে শুধু মাছ শিকারের অনুমোদন থাকলেও তিনি অবৈধভাবে বিলের উজানভাটিতে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে বানার বাঁধ তৈরি করেছেন, এতে ব্যবহার করছেন নিষিদ্ধ সুতাজালও। এর ফলে বিলের পানি আটকা পড়েছে। এতে এইসব বিলে আমন ধানও কাটতে পারছেন না। অন্যান্য আবাদও করতে পারছেন না। প্রতিবাদ করলেই মারধর ও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, বড়বিল, রাখশারবিল, শেওলারোল বিল, জুনাইলবিল, দীকশির বিল, পাচুরিয়ার বিল, গজারিয়ায় বিল, তেলকুপির বিল, হাতিগাড়ার বিল, কানাগাড়ার বিল, ডেঙ্গার বিল ও খাগরবাড়িয়াসহ পাবনা ও নাটোরের অন্তত ৪০টি বিলের পানি সাধারণত অক্টোবরের শেষের দিকে ঘেচুয়া সুইচ গেট দিয়ে যমুনার নদীতে নেমে যায়। নভেম্বরের শুরুর দিকেই বিল পানি শূন্য হয়ে যায়। ফলে জমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে কৃষকরা পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, খেঁসারিসহ নানান ফসলের আবাদে জড়িয়ে পড়েন। এইসব বিলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি রয়েছে। আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাজার হাজার কৃষক।
সরেজমিন দেখা গেছে, খাগরবাড়িয়ার সুইচ গেটের সবকটি গেট আটকানো। গেটের কিছু দূরে সুইচ গেটে আসার পানির ¯্রােতধারে তৈরি করা হয়েছে এই বানার বাঁধ। এতে কাজ করছেন অর্ধশত মানুষ। তারা জাহাঙ্গীর মেম্বার ও জিয়া চেয়ারম্যানের নির্দেশে কাজ করছেন বলে জানান। কিছুক্ষণ পরে জলমহলের সীমানা নির্ধারণের জন্য সেখানে উপস্থিত হোন উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুরশিদা খাতুন। বিষয়টি তার নজরে নিয়ে আসা হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন কৃষকদের। পরে কোনও ধরনের ব্যবস্থা না নিয়েই স্থান ত্যাগ করেন বলে কৃষকরা জানান।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন বনয়ারীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক টাকা দিয়ে জলমহল ডেকেছি। ওইগুলো না করলে ইজারা নেয়া সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই কাজ সব জায়গায় হচ্ছে। এখানে কৃষিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পানি ঠিক সময়ে নেমে যাবে।’
ফরিদপুর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমরা গতকাল সেখানে গিয়েছিলাম। ওরা কেবল বানার বাঁধ তৈরি করছে। আমরা তাদের নিষেধ করেছি। দ্রুত বানার বাঁধ তুলে নিবে। তুলে না নিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফরিদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আল ইমরান বলেন, ‘আমি এখনও পর্যন্ত বিষয়টি জানি না। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আমাকে বিষয়টি জানায়নি। আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম, এখনই খোঁজখবর নিচ্ছি। এই ধরনের বানার বাঁধ তৈরি করে বা যেকোনও উপায়ে পানি আটকানোর সুযোগ নেই। কারণ- কৃষি আবাদের ব্যাপারে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এই সব বিলে দ্রুত ফসল আবাদের যেতে ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।’
পাবনা জেলা মৎস কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষকের সর্বনাশ করে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকারের কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমীন আরার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার কোনও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।