নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
নিয়ম নীতি থাকলেও তোয়াক্কা নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটছে এমনি ঘটনা। সবাই যেন দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে। সবার এমন উদাসীনতায় সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তা বছর না পেরোতেই ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় ট্রাকের দৌরাতœ বেড়েই চলেছে। গত বছরও একই ভাবে যত্রতত্র ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করায় উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা ভেঙ্গেচুড়ে একাকার হয়ে যায়। অবশিষ্ট রাস্তাগুলো এবার ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করায় চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে,বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসের সিও রবিউল ইসলামের চত্রছায়ায় এখন পুকুর খনন কাজে উপজেলায় পরিনত হয়েছে। তবে উপজেলা মৎস দপ্তরের কাছেও এই পুকুরের কোন পরিসংখ্যান নেই। প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে এখানে পুকুর খননের হিড়িক পড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পুকুর সি-িকেট চক্রের হোতারা ভেকু(মাটিকাটা মেশিন) ভাড়া করে এনে পুকুর খননে আগ্রহী ব্যক্তিদের সাথে চুক্তি করা শুরু করেছে। তারা উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও দলীয় কিছু নেতাকে ম্যানেজ করে পুকুর খননে নেমে পড়েছে। উপজেলার মাড়িয়া ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এরই মধ্যে পুকুর খনন শুরু হয়েছে। ভবানীগঞ্জ হামিরকুৎসা রাস্তার পাশে তিন ফসলী জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। স্থানীয়রা জানান, এসব অবৈধ পুকুর খননের মাটি নামমাত্র মূল্যে কিনে নিচ্ছে ভাটা মালিকরা। আর এসব মাটি ট্রাকে করে ভাটায় নিয়ে যাওয়ার ফলে ট্রাক থেকে মাটি পড়ে রাস্তা একাকার হয়ে যাচ্ছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি গোয়াকান্দি এলাকার কনোপাড়ার খামার পাড়া এলাকার ৪০ বিঘার তিন ফসলি জমিতে দিনরাত পুকুর খনন করছে তাহেরপুর এলাকার জামগ্রামের সোহেল নামে এক ব্যক্তি। এসব মাটিও তিনি আশেপাশের ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে সোহেলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এই নিউজ প্রকাশ না করে তার সাথে দেখা করার জন্য বলেন। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রশাসনের অফিস সুপার ভাইজারের সাথে পুকুর খনন চক্রের কথিপয় হেতা যোগাযোগ করে তাকে ম্যানেজ করে দেদারছে পুকুর খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এই উপজেলায় শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। এসব পুকুর খননের মাটি যাচ্ছে যাচ্ছে ইটভাটায়।স্থানীয়দের মতে, দিনের বেলা এভাবে ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট ও অহরহ ঘটছে দূর্ঘটনা। এসব ট্রাকের গতিও থাকছে বেপরোয়া। চরম আতংঙ্ক সৃষ্টি করে তারা রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ২/৩ দিন ধরে ভবানীগঞ্জ বাজারে এমন বেপরোয়া ট্রাকের আনাগোনা লক্ষ করা গেছে। বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা জানান, এসব মাটি মাড়িয়া এলাকার পুকুর খননের মাটি। মাটি গুলো মাড়িয়া, দ্বীপপুর, বাসুপাড়া ও বাইগাছা এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এভাবে ট্রাক ভর্তি করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে ভবানীগঞ্জ- হামিরকুৎসা, ভবানীগঞ্জ দ্বীপপুর ও ভবানীগঞ্জ হাটগাঙ্গোপাড়া রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এক বছরও হয়নি এই রাস্তাগুলো নির্মাণ করা। ওভারলোড মাটির ট্রাক চলাচল করায় এবং ট্রাক থেকে মাটি পড়ে এরি মধ্যে রাস্তার বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সিএনজি চালক রেজাউল করিম বলেন, যেভাবে মাটি ভর্তি ট্রাক রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে সিএনজি নিয়ে চলাচলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত এসব ট্রাকের না কোন রোড পারমিট না আছে কোন বৈধ কাগজপত্র। তারা পুলিশ সহ পৌরসভার অবৈধ টোল আদায়কারীদের টাকা দিয়ে রাস্তায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, গত মিটিংয়ে আমি এই বিষয়ে তুলে ধরেছি। কোন ভাবেই যেন মাটি পরিবহনের ট্রাকের কারণে রাস্তার ক্ষতি না হয় আমরা সে বিষয় লক্ষ রাখছি। থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, এভাবে ট্রাকে করে মাটি পরিবহনে সাধারন পথচারীদের দূর্ভোগ বাড়ছে রাস্তারও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম জানান, উপজেলা সমন্ময় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অন্তে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করি অবৈধ পুকুর খনন ও ট্রাকে করে মাটি পরিবহন দুটোই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।