আজ ২৭ মার্চ, বিশ্ব নাট্য দিবস। ১৯৬১ সালে এ দিবসের ভাবনা মাথায় আসে। ১৯৬২ সালের ২৭ মার্চ প্যারিসে “থিয়েটার নেশনস” নাট্যোৎসব শুরু হয়। ইউনেসকো এ দিনটিকেই বিশ্ব নাট্য দিবস ঘোষণা করলে সেই থেকে ২৭ মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর নাট্য দিবসের প্রাক্কালে একজন নাট্য চিন্তক তার থিয়েটার সংক্রান্ত ভাবনা মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন।
প্রসঙ্গতঃ নাটকের উর্বর ভূমি চাটমোহর। চাটমোহরের নাটক সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষ নাটককে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ক্রমশই তারা হয়ে উঠেছেন নাটকের মানুষ। কেউবা বাধ্য হয়েছেন নাটক থেকে দূরে চলে যেতে। নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা বৃন্দাবন দাসকে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইতিমধ্যে তিনি অসংখ্য নাটক লেখার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন প্রচুর নাটকে। নাটক রচনায় নিজস্ব স্টাইল এবং অসাাধারণ অভিনয় দক্ষতার কারণে কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। বাংলা নাটকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাহানাজ খুশী বৃন্দাবন দাসের স্ত্রী। প্রচুর নাটকে অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে তিনি কেবল বৃন্দাবন দাসের স্ত্রী নয় একজন দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে স্ব-নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। বৃন্দাবন-শাহানাজ দম্পতির দুই সন্তান সাম্য-সৌম্য নিয়মিত সময় দিচ্ছেন নাটকে। এরা চাটমোহরের সন্তান।
একজন দক্ষ খেলোয়ার থেকে বৃন্দাবন দাস যখন নাটকে সম্পৃক্ত হন তার আগে-পরে চাটমোহরে চাটমোহর মুক্ত নাটক দল, বোঁথর মুক্ত নাটক দল, মথুরাপুর মুক্ত নাটক দল, তূর্য নাট্যম, সমন্বয় থিয়েটার, অর্ণব মুক্ত নাটক দল, চিকনাই থিয়েটার, স্টুডেন্টস থিয়েটার এমন অনেক নাটক দল নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা তৈরী করেছে। নাটকের এ সংগঠনগুলোর কোন কোনটি হারিয়ে গেলেও এখনও চাটমোহরের কয়েকটি নাট্য সংগঠন কাজ করে চলছে।
নাটকের নিবেদিত প্রাণ কর্মী, নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা আসাদুজ্জামান দূলাল। কালার বনবাস, চাঁদের হাট, পানসীবিলাস, ভূতের পাঁচ পা, নহ নর্তকী, সাতকাহনসহ অনেক মঞ্চ নাটক রচনা করেছেন তিনি। নির্দেশনা দিয়েছেন অনেক নাটকে। অভিনয় দক্ষতা দেখিয়ে তিনি এ এলাকার সকলের মনে স্থান করে নিয়েছেন।
চিকনাই থিয়েটারের সাথে যুক্ত নাট্যকার আব্দুস সালাম। ইতিমধ্যে এক আজলা রক্ত, একুশ আজও রক্ত চায়, রিটার্ড ফাদার, অভিমুখে, দুশমনের কালো হাত, শশুর বাড়ি মধুর হাড়ি, সংকেত, মধুচক্র, কালা কানুন, অন্তর্দাহ,স্বপ্নকর্ষক, ভেলকি মঞ্চ নাটক লিখে ও প্রদর্শন করে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
গহর গাছি নাটকের রচয়িতা হাফিজ রেদু সমৃদ্ধ করেছেন নাট্য জগতকে। চাটমোহরের সন্তান শাহজামান মিয়া বাংলাদেশ টেলিভিশনে চাকুরী করার সুবাদে অনেক নাটক তৈরী করেছেন। রশীদ নিউটন, মিলন শীল, সুকুমার দাস ও ভূমিকা রেখেছেন নাটকে। এরা সবাই চাটমোহরের সন্তান।
আসাদুজ্জামানের রচনা ও নিদেশনায় কালার বনবাস নাটকে হিজড়া চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন কারী, একসময়ের তুখোর নাট্যাভিনেতা পঙ্কজ সরকার জানান, নাটকে চাটমোহরের কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠা পেলেও অনেক নাট্যাভিনেতাকে স্ব প্রয়োজনেই নাটক থেকে সরে যেতে হয়েছে। উত্তম মোহন্ত, জিয়ারুল হক সিন্টু, বিপ্লব আচার্য , রকিবুর রহমান টুকুন, অলক বাগচী , গৌতম কুন্ডু, আলী আহম্মেদ, ফজলু, হাফিজ , ফকির জহুরুল, সুজিত মনা হেলাল, বকুল রহমান, মিন্টু দত্ত, আসাদুজ্জামান লেবুসহ অনেক নাট্যাভিনেতা হারিয়ে গেছেন নাট্যাঙ্গন থেকে।
আশার কথা, চাটমোহরের নতুন কিছু ছেলে মেয়ে পা রাখছে মঞ্চ নাটকে। স্টুডেন্টস থিয়েটার আর্ট নামক নতুন নাট্য সংগঠন কিছু দিন আগে কাজ শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে জেমান আসাদ জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কয়েককটি শো তে স্টুডেন্টস থিয়েটার আর্ট এর নাট্যকর্মী জামিয়া শান্তা, মেহেদী ইয়ানুর মিথেল, নিহাল, বৈশাখীসহ বেশ কয়েকজন ভাল অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছে।