প্রিয়তমার কাছে মুক্তিযোদ্ধার চিঠি

হে প্রিয়তমা,হে প্রিয় বন্ধু,হে পরাণের বধু,
হে আমার ভালোবাসা জীবনসঙ্গী প্রেম ও প্রিয়তম বধু।
হে আমার বিপ্লবী জীবনের একমাত্র দৃঢ় সংগ্ৰামী সাথী,
প্রত্যাশার দীপ্ত স্বপ্নভরা সবুজ ফসলের মাঠ উদ্যান বিথি।
জাতির এই প্রিয় ভূখণ্ড স্বাধীনতার ঐক্যে
আমি যুদ্ধে যাত্রী এক বীরযোদ্ধা সৈনিক।
যাওয়ার আগে রণাঙ্গানে মৃত্যুর কথা ভেবে ভেবে,
তোমার কাছে চিঠি লিখলাম ভীষণ ব্যথার আবেগে।
কতো গভীর চিন্তা,কতো বিষণ্ণ যন্ত্রণা,
কতো বেদনায় নির্বাক হই জীবন বিপন্ন।
নিরব আনন্দ ও যন্ত্রণার ভেতরেই যেন
জীবনের কোলাহল ইতিহাস ডাকে মৃত্যু আসন্ন!
এমনই সাহসী জীবন থেকে তোমার কাছে
আগামী শোক বার্তা পাঠালাম বিদগ্ধ চেতনার সাঁঝে।
ভালোবাসা আর দেশপ্রেমের মমতায় আমি কর্ম বিভোর আজ,
এই মায়া ও স্নেহভরা বৈচিত্রময় মানবতার
মহৎ পৃথিবীতে,
আমার আরও কিছু দিন আরও কিছু রাত
বেঁচে থাকার ইচ্ছে ছিল স্নেহ প্রীতি মমতায়।
তোমার সাথে মধুর সংসার করার আকাঙ্ক্ষায়।
কিন্তু মৃত্যু আমাকে বার বার ঘিরে ধরে
মহান স্বাধীনতার দীপ্তিময় চেতনার ভীড়ে!
মৃত্তিকার গভীর ভালোবাসা আমাকে
দেশপ্রেমে জাগ্রত করে প্রবল সংগ্রামী বিবেকে।
এই সময় ও মহাকাল আমাকে প্রগতিশীল করে তোলে,
আসন্ন মুক্তির নতুন চৈতন্য বিপ্লবী অনলে।
আমি তোমাকে প্রাণের কথা বলতে চেয়ে বলতে পারিনা,
শুধু এই সৌন্দর্যভরা আমার প্রিয়তম স্বাধীনতার জন্যে অনন্যা!
প্রিয়তমা বন্ধু,প্রিয়তম প্রেম আমার
তুমি গতকাল ও আজ রাতেও আমার
দিকে মমতায় তাকিয়ে ছিলে আর
দু-চোখ তুলে সুন্দর বিবেকে বিভোর,
তত্ত্বজ্ঞানে ও মৃদু হাসি দিয়ে বলেছিলে হে বিদগ্ধ বন্ধু,
হে জীবন সংসার সৌন্দর্যভরা আগামী জীবন মনোমুগ্ধ।
হে মুক্তিযোদ্ধা,হে দেশপ্রেমিক,হে বীর,হে মহাবীর।
হে অনাগত যুদ্ধের ন্যায়-পরায়ণ সাহসী সৈনিক সংস্কার।
তোমাকে হয়তো ঐ স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক শত্রুরা,
বেঁচে থাকতে দেবে না,কিন্তু তারপরও
তুমি যুদ্ধে যাও,
আমাদের দাবি অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য নতুন তরী বাও-
তুমি হয়তো যুদ্ধে গিয়ে ফিরে আসতে নাও
পারো,
তবু তুমি দেশের জন্য মুক্তির আন্দোলন ও সংগ্রাম করো।
আমি বললাম প্রিয়তম বিনিময়ে তুমি পাবে দাসত্ব থেকে মুক্তি,
জন্মভূমি আমাদের দেশপ্রেম আর অনাদি ভালোবাসার শক্তি।
প্রিয় বন্ধু,যদিও তোমাকে হারানোর ব্যথায় আসন্ন মৃত্যুর শোক,
আমাকে দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রণার বেদনা দেয় বড়ই ক্লান্ত নির্বাক!
তুমি বলো হে প্রিয়তম বন্ধু,কিভাবে আমার বিবেক,
আর আমার অন্তরকে বুঝাবো তোমার বেদনা ব্যথা শোক,
আমি আনন্দে হেসে প্রিয়তমা বন্ধুকে বললাম যুদ্ধে মানেই মৃত্যু,
যুদ্ধ মানেই ফিরে না আসার যন্ত্রণায় জীবন চিত্ত।
শত্রুদের সাথে লড়াই করবো শহীদ হবো,
তারপর হবো মহাকালের ইতিহাস আর্দশ গর্ব!
এই সুন্দর স্বদেশ ও মৃত্তিকার সবুজ ফসলের মাঠ ভালোবাসে,
আমি চির নিদ্রায় ঘুমাবো শান্তি ও প্রশান্তির জীবন অশেষ!
প্রিয়তমা ভালোবাসা আমার,
তুমি শুধু বাস্তবতার আশায় সাহসী থেকো মহান স্বাধীনতার!
এই প্রিয়তম দেশ ও মাতৃভূমির জন্য,
এই প্রিয়তম বাংলা ও জন্মভূমির জন্য,
এই প্রিয়তম প্রেম ও তোমারকে গভীর ভালোবাসার জন্য,
আমি হবো অনির্বাণ শিখা প্রজ্ঞাময় অনন্য!
যদি রাতের কালো অন্ধকারে ঘাতকরা আমাকে করে আঘাত,
যদি আমাকে দীর্ঘ মৃত্যুর দিকে হেঁটে যেতে হয় জীবন রক্তপাত,
তবুও আমি বীর বেশে হেঁটে যাবো বিজয়
স্বাধীনতার পতাকা হাতে বিপ্লবী সূর্য উদয়।
আমার দেশপ্রেমর রক্তেই স্বাধীনতা অর্জিত হবে লাল সবুজ পরিচয়।
মানবতার যুদ্ধে ঐ স্বধীনতা বিরোধী সব ঘাতক শত্রুরা,
ভয়ে পালাবে নিরুপায় দিক-বিদিক পরাজয় কুলহারা।
এমন স্বাধীনতার জন্য যদি আমার মৃত্যু হয়
তবে তুমি চেতনাময় প্রিয়তমা,সামনে মুক্তর নতুন সূর্য উদয়!
মনে রেখো আমার মৃত্যুর পর তুমিই হবে
নতুন যোদ্ধা আগামী বংধরদের জীবন অধিকার গৌরব।
তোমার হাতেই থাকবে সম্মান ও মর্যাদার পরিপূর্ণ কল্যাণ আদব,
অনাগত উত্তরসূরীদের হাতে তুমিই তুলে দেবে,
ফসলের নতুন চেতনা দিকে দিকে সজিব!
আমাদের মহান বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার পতাকা সম্মান গৌরব।
আমাদের সেই বিপ্লবী জীবনের দক্ষ চেতনা
আমাদের সেই সুন্দর দিনগুলো আসন্ন
আগামীতে ফিরে আসবে দক্ষ নিপুণ!
সেই নব চেতনায় তুমি আবার স্বদেশকে জাগিয়ে তুলবে,
নতুন নতুন প্রাণ চির বৈচিত্র্যময় সৌরভে।
উত্তরসূরীদের জন্য উচ্চ ফলনের শস্য ফলাবে বিজ্ঞ স্বাভাবে।
আমার সাম্য চৈতন্য ও শ্রমের অধিকারে
পৃথিবী আবার জেগে উঠবে সু-ষমবন্টন আবাদের খামারে।
বিপ্লবী জীবনগুলো ক্ষুধামুক্ত শ্লোগান দেবে সমান সাম্যের।
তখনই আমাদের বিজয় ও সংস্কারে আসবে নির্মল বসন্ত,
তুমি জন্মভূমির গান গাইবে অনাদি চিরন্তন ও অনন্ত!
সেই সদ্য সুরে সুরে আমি জেগে উঠবো,
এই স্বদেশ ও তোমার প্রেমে পূণজাগরণ গৌরবে!
তোমার তৃতীয় নয়নের আমি দেখবো সদ্য জীবনের স্পন্দন।
বাংলার প্রথম মুক্ত ভোর ও সোনালী সূর্য কিরণের সকাল নিপুণ।
আরও দেখবো প্রেম ও ভালোবাসার মধুময় দিনগুলো কতো সুন্দর,
কতো অসমপ্ত অসহ্য বেদনা ব্যথার
ক্ষত-বিক্ষত বিরহ স্মৃতিগুলোর সংসার।
ক্লান্ত যন্ত্রাণায় ফেলে আসা অধিকার
আর সেই রাত্রিগুলোর নিরব ভোর।
প্রিয়তমা প্রেম ও ভালোবাসা আমার জীবন
যদিও কষ্ট ও বেদনার গভীরে জমা আছে কতো অজানা রহস্যধন!
তুমি সুন্দর মন ও মমতার সংসার আশায়,
আমার জন্য প্রতিক্ষায় থেকো সর্বক্ষণ সদয়,
মৃত্যুর চিঠি নিয়ে তুমি কখনো কষ্ট করো না জীবন অক্ষয়।
যদিও ঘাতকরা বহুদিন ধরে আমার পেছনে পেছনে ঘুরছে চক্রান্ত-
ওরা অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে নিষ্ঠুর ও নির্মম ষড়যন্ত্র।
ওরা আমাকেও হত্যা করতে চেয়েছিল ক্রোধ ও হিংসায়।
আমিতো ইতিহাস আর মহাকালের যাত্রায় মৃত্যুঞ্জয়!
তুমি বেদনার গভীরে প্রেমের চেতনায় গিয়ে
আমার ভালোবাসাটুকো উপলব্ধি করো
মাতৃভূমির পরিচয়,
আমি দূর থেকে প্রতিক্ষা করবো
আর তোমাকে দেখবো নতুন আলোয় বাংলার শস্য সজিব।
তুমি সামনে ও পেছনের দিকে তাকিয়ে
হঠাৎ আমাকে ভুলে যেও না প্রিয়তমা বন্ধু নিরুপায়!
কারণ তুমি হচ্ছো আমার দীর্ঘ সময়ের
বিশ্বাসী যোদ্ধা ও সাম্য আলো উদয়ের দীর্ঘ সংস্কার।
যুদ্ধের ময়দান থেকে তোমার কাছে চিঠি পাঠালাম বন্ধু।
হয়তো বেঁচে থাকবো নয়তো মৃত্যুর স্বাদ নিয়ে ঘুমাবো মুগ্ধ,
হয়তো বিদগ্ধ চেতনায় ইতিহাস হবো!
অথবা অমরত্ব অমরত্ব দেশপ্রেমে প্রজ্বলিত হবো।
তুমি বেঁচে থেকো বন্ধু,তুমি বেঁচে থেকো, প্রিয়তমা প্রেম ও ভালোবাসা আমার বিবেকে।
আরও বেঁচে থাক দেশ,আরও দীর্ঘজীবী হোক আগামী বংশধর আমাদের,
প্রিয়তম এই মহান জাতি আর
প্রিয়তম এই মহান স্বাধীনতা আমাদের।