রত্নেগর্ভা পুণ্যভূমি নেত্রকোনা

রাসেল কবির

আমি জন্মেছি বাংলার বিখ্যাত সবুজ গ্রাম-ফতেপুরে,
যার আশেপাশে রয়েছে সবুজের সমারোহ,
গ্রামের সামনে বিল, পূর্ব দিকে মাঠ আর মাঠ। আহা কি প্রান্তর!
এই অপরূপ সবুজের দিকে তাকালে মন জুড়ে যায়।

পড়েছি মদন উপজেলার বিখ্যাত স্কুল- ফতেপুর এস,এ, সি উচ্চ বিদ্যালয়ে,
কলেজে পা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের একমাত্র বাঙলা কলেজ- সরকারী বাঙলা কলেজ, ঢাকা।
সর্বশেষ পড়ার সুযোগ হয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

আ্মি নেত্রকোনার ভাষায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?
আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে, যে চর্যাপদের প্রধান কবি কাহ্নপাদ জন্মেছে এই উর্বর ভূমিতে।
আমি তো এসেছি হাজং বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালা গানের পালা গুলো থেকে ।
এসেছি বিখ্যাত চীনা মাটির পাহাড় থেকে
এসেছি টঙ্ক আন্দোলনের গ্রামগুলো থেকে।
এসেছি রোয়াইল বাড়ি দুর্গ থেকে।
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
আমি তো এসেছি স্বাধীন বঙ্গ ভূমি থেকে।
আমি তো এসেছি ‘কমলার দীঘি’ ‘মহুয়ার পালা’ থেকে।
আমি তো এসেছি কৃষক কৃষাণীর পল্লী জননী থেকে
আমি তো এসেছি আগুনের পরশমনি আর নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় থেকে।
এসেছি মধ্যযুগের বিখ্যাত কবি কঙ্ক থেকে
এসেছি চন্দ্র কুমার দে, আর মনসুর বয়াতি থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালির মহানায়ক আবু তাহের থেকে।
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে ‘এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।
আমিতো এসেছি বাউল সাধক জালাল খা থেকে
আমিতো এসেছি মরমি সাধক চান মিয়া থেকে।
এসেছি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী শৈলজানন্দ মজুমদার থেকে
এসেছি লোক সাহিত্য বিশারদ সিরাজ উদ্দিন কাশেমপুরী থেকে।
আমিতো এসেছি জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ থেকে
আমিতো এসেছি কবিদের কবি নির্মলেন্দু গুণ থেকে।
এসেছি যতীন সরকার, ভাস্কর শিল্পী অখিল পাল থেকে
এসেছি বারী সিদ্দিক, কুদ্দুস বয়াতি থেকে।
আমিতো এসেছি প্রখ্যাত বাউল সাধক উকিল মুন্সি আর রশিদ উদ্দিন থেকে,
আমিতো এসেছি প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ থেকে
এসেছি কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ জাফর ইকবাল ও মোস্তফা জব্বার থেকে।
আমিতো এসেছি হযরত শাহ সুলতান কমরউদ্দিন রুমি (র) মাজার শরীফ থেকে
আমিতো এসেছি সাত শহীদের মাজার- লেঙ্গুরা থেকে
আমিতো এসেছি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী থেকে।
আমিতো এসেছি কমলা রাণীর দিঘী থেকে।
আমিতো এসেছি ডিঙ্গাপোতা হাওর থেকে
আমিতো এসেছি জালিয়ার হাওর আর তলার হাওর থেকে ।
এসেছি গনেশ্ব হাওর আর বাগড়ার হাওর থেকে ।
আমিতো এসেছি সাইডুলি আর কংস নদী থেকে
আমিতো এসেছি ধনু আর ধলাই নদী থেকে।
এসেছি মরাগাঙ আর মগড়া নদী থেকে
এসেছি নেত্রকোনার বিখ্যাত সোমেশ্বরী নদী থেকে।
আমিতো এসেছি এদেশের বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির দেশ থেকে
আমিতো এসেছি ধান, আর মাছ চাষের এলাকা থেকে।
এসেছি আউল, বাউল এর পাগলের দেশ থেকে
এসেছি পীর আউলিয়ার দেশ থেকে।
আমিতো এসেছি গারো পাহাড়ের দেশ থেকে
আমিতো এসেছি বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড় থেকে।
এসেছি নারায়ণডহর জমিদার বাড়ি আর
বাঘবেড় জমিদার বাড়ি থেকে।
আমিতো এসেছি রাজধলার বিল থেকে
এসেছি উচিতপুরের মিনি কক্সবাজার থেকে।
আমিতো এসেছি পল্লীর কাদামাটি থেকে
এসেছি পল্লী মায়ের বুক ছিড়ে তোমাদের ভালোবাসতে।
আমিতো এসেছি রাজমনি হাজং থেকে
এসেছি কমরেড মনি সিংহ থেকে
আমিতো এসেছি দূর্গাপুরের অচেনা ছোট ছোট পাহাড় গুলো থেকে
এসেছি হাওড়ের কাদামাটি আর চোখ ধাধানো সবুজ প্রান্তর থেকে।
পরিচয়ে আমি মানুষ, তারপর মুসলমান, সবশেষে আমি বাঙ্ালি, আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হ’লো ইতিহাস।
এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।