রাজশাহীর শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই পানি কমে যাওয়ায় পদ্মার বালুচরে কৃষকরা বিভিন্ন সোনার ফসল ফলিয়ে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছেন। এখন পদ্মার বুকে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদে বদলে দিয়েছে তারা প্রকৃতির রূপ। এক সময় পদ্মা ছিল দুঃখের কারণ এখন আর সেই পদ্মার বুকে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে অভাব দূর করছেন এখানকার কৃষকরা। ধূধূ বালুচরের পলি মাটিতে পিয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, সিম, গাজর, মুলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদে ভরে উঠেছে। অক্লান্ত পরিশ্রমে অসম্ভবকে সম্ভব করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন নদীভাঙা শত শত পরিবার গুলো। নদী বর্তমানে সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত নদী খনন এবং ড্রেজিং না করায় দিনের পর দিন পলি মাটিতে ভরে উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরজমিনে গিয়ে দেখাগেছে,নদী ভাঙনে বাপ-দাদার বসতভিটা ছেড়ে ভিন্ন জেলায় চলে যাওয়া পরিবারগুলো আবারো এলাকায় ফিরে এসে বালুচরে শুরু কওে দিয়েছে নানাবিধ ফসলের চাষাবাদ। নদীর বুকে জেগে ওঠা পরিত্যক্ত বালুচরে উন্নয়নের স্বপ্নে ফসল বুনে ঘরে তুলছেন খেটে খাওয়া সাধারন মানুষেরা। এইতো কয়েক বছর আগে যেখানে ছিল বালুচর, সর্বনাশা পদ্মার গ্রাসে ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। এমনকী অভাব অনটন ছিল তাদের নিত্যদিনের সাথী। এখন তা বদলে গেছে তাদের জীবন যাত্রা। পদ্মার বালুচরে বন্যায় পলিমাটি জমে উঠায় এসব চর এখন উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। বালুচরে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজের সমারোহ। পদ্মায় শীতকালে পানি থাকেনা। নদীর তলদেশ শুকিয়ে জেগে ওঠে বালুচর। সেই বালুর চরে এলাকার কৃষান-কৃষানীরা জট বেধে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাচ্ছে। এবং তাতে তারা লাভবান হচ্ছে। জেলার পবা,গোদাগাড়ী,বাঘা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন চরে এবছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে ফলবে বোর ধান। এছাড়া আরো কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে ফলবে গম,মসুর,মিষ্টি আলু,ভুট্টা,পেঁয়াজ ধান, মিষ্টি কুমড়াসহ হরেক রকম ফসল। কৃষকরা জাননা,বাঘা উপজেলার গড়গড়ি,পাকুড়িয়া,মণিগ্রাম ইউনিয়নের চরের পরিবারগুলো বিশাল বালুচরকে কাজে লাগিয়ে অভাব দূর করছেন। ওই সকল পরিবারগুলো বিভিন্ন ফসল চাষ করে অসহায় দূর করছেন। নারীরা তাদের স্বামী-সন্তান নিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করে বিভিন্ন ফসল ফলাচ্ছেন। সেই ফসল বিক্রি করে সাফল্য দেখচ্ছেন। এছাড়া চলতি মোৗসুমের সুরুতে রবি ফসল চাষ করে চাষীদের মুখে এখন হাসির ঝলক। চরের চাষীরা জানান,বালুচরে কোন ফসল ফলানো যাবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি তারা। এবং সেখানে বালুচরের পলি মাটিতে ফসল রোপণ করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছি। তারা আরো জানান, প্রতি বছরই বাড়ছে চাষের পরিধি। সেই সঙ্গে বাড়ছে ফলন। লাভের টাকা হাতে পেয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষকরা। জেলা কৃষি অফিস বলছেন, গত কয়েক বছর থেকে বালুচরে বিভিন্ন বন ফসল চাষ হচ্ছে। আগের চেয়ে এবার ফলন আরো বেশি হবে এবং দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বলছেন,চাষিরা এখন বিভিন্ন আবাদে ব্যস্ত। আবহাওয়া প্রতিক‚ল হলেও চরের আবাদ এখন পর্যন্ত ভালো রয়েছে। এবং কোন এলাকা থেকে এখনও রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ার খবর আমাদের কাছে আসেনি। এবং আগামীতে আবহাওয়া ঠিক হলে কোন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি। তবে সরকারি সহায়তা পেলে ওইসব উদ্যোমী মানুষের হাতেই ভাগ্য বদলে যাবে বলে চরের মানুষ জনেরা আশা প্রকাশ করছেন।