চাটমোহরে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ

পাবনার চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা বৌবাজারে রোডস এন্ড হাইওয়ের রাস্তায় পুরাতন ব্রীজের জায়গায় অপ্রয়োজনে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে নতুন একটি কালভার্ট। এলাকাবাসীর অভিমত কালভার্টটি নির্মিত হলে তা এ এলাকার মানুষের জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। এখানে কালভার্ট নির্মাণ হলে সরকারের এ টাকা অযথা নষ্ট হবে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন এলাকর লোকজন। কালভার্টের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারবে এটি সত্য হলেও এ কালভার্ট এর মধ্য দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত পানি প্রবাহ সৃষ্টি করলে এর সাথে সম্পৃক্ত পাবনা ও নাটোরের প্রায় ২০ টি বিল পাড়ের লাখো মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই এ কালভার্টটি নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সরেজমিন উক্ত এলাকা পরিদর্শন করে ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে কাটেঙ্গা বৌবাজারে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ব্রীজটি ভগ্নদশায় নিপতীত। পুরাতন ব্রীজ অপসারণ করে এ স্থানেই ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ মিটার দীর্ঘ এবং ১০.২৫ মিটার প্রস্থ একটি নতুন কালভার্ট নির্মাাণ কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে পার্শ্ব রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মঈনুদ্দিন বাঁশি। বর্তমান ব্রীজের পশ্চিমে চলনবিলের কুকুরমারী বিল অবস্থিত। অতীতে এ ব্রীজের নিচ দিয়ে গুমানী নদী থেকে বিলে পানি প্রবেশ করতো এবং বেরিয়ে যেত। এ এলাকার পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিলচলন ইউনিয়নের কিনু সরকারের জোলায় প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে কয়েক বছর পূর্বে একটি ¯øুইজগেট নির্মিত হয়। কাটেঙ্গা বৌবাজারের ব্রীজের ৪০ গজ পশ্চিমে নালার উপর আড়াআড়ি ভাবে একটি সরকারী রাস্তা রয়েছে। কয়েক বছর পূর্বে সরকারী ভাবে এ রাস্তার উপর মাটি ফেলে নালাটি ভরাট করে ফেলা হয়। ফলে এ ব্রীজের উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও পানির আসা যাওয়া তখন থেকে বন্ধ হয়ে যায়। ব্রীজের পশ্চিমের নালাটি শিয়ালের হালট (রাস্তা) নামে পরিচিত। এ নালা বা শিয়ালের হালটের উপর এক কিলোমিটার এলাকায় আড়াআড়ি অন্তত দশটি বাঁধ রয়েছে। পাশাপাশি অনেকে এটি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ স্থলে ব্রীজ নির্মাণ হলেও বাঁধ গুলো অপসারণ না করলে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা যাবে না। আবার বাঁধ গুলো অপসারণ করে পানির প্রবাহ সৃষ্টি করলে ভেঙ্গে পরবে পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। যা এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে। পাশাপাশি নিমাইচড়া ইউনিয়নের ধানকুনিয়ায় বিলমুখি একটি খাল পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য বন্ধ করে ফেলা হয়েছে কয়েক বছর আগে।
কাটেঙ্গা গ্রামের সাহেবুল্লা সরদারের ছেলে মান্নান সরদার, রকমত মন্ডলের ছেলে মন্টু মন্ডল, জানমাহমুদ সরকারের ছেলে ফজের সরকার, আলী প্রাং এর ছেলে বাঁশি প্রাং, মনছের মন্ডলের ছেলে ইউনুস মন্ডল, চৈতা মন্ডলের ছেলে আসাদুল মন্ডল ও গোলাম মোস্তফা জানান, এখানে কালভার্ট নির্মাণ হলে সরকারের অযথা এ টাকা নষ্ট হবে। এ এলাকার পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এখন আমাদের জমিতে ভাল ফসল হয়। এখন আমাদের অভাব নেই। কাটেঙ্গা গ্রামের অধিবাসী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পাবনা জেলা শাখার উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ গোলজার হোসেন জানান, এখানে ব্রীজ নির্মাণের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। অযথা অপ্রয়োজনে সরকারের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। নালাটি সচল করলে পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরবে। এ এলাকার মানুষকে আবার অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তাই এ স্থানে ব্রীজ নির্মাণ না করে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়াই ভালো। এখনো বিষয়টি পূনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।

এ ব্যপারে ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, কালভার্টটি করছে রোডস এন্ড হাইওয়ে। যতদূর শুনেছি ফের এ স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড পানির প্রবাহ সৃষ্টি করবে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সৈকত ইসলাম জানান, যেহেতু এটি রোডস এন্ড হাইওয়ের ব্যাপার তাই এখানে আমার মন্তব্য করার কিছু নেই।

এদিকে রোডস এন্ড হাইওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জোহা জানান, জেলা মহাসড়ক হিসেবে এ রাস্তা চাটমোহরের সাথে গুরুদাসপুর ও সিংড়ার সাথে যুক্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জলাধার বন্ধ করা যাবে না। কাজেই আমরা এ খালটি বন্ধ করতে পারি না। রাস্তাটি সরু হওয়ায় পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলাচচল করতে পারে না বিধায় এটি প্রশস্ত করা হচ্ছে।

অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল আলম চৌধুরী জানান, আমি পাবনায় নতুন এসেছি। বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।