যশোর প্রতিনিধি : দিলীপ পাল। বাড়ি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামে। লেখাপড়ায় প্রাইমারীর গন্ডি পেরুতে পারেননি। চুড়ামনকাটি বাজারের হাফিজিয়া মাদ্রাসা লাগোয়া তার একটি মাটির হাড়ি পাতিলের দোকান রয়েছে। কিন্তু হাড়ি পাতিল বিক্রেতা দিলীপ পাল এখন চিকিৎসক বনে গেছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি আবার কবিরাজিও করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট কোম্পানির লেবেল না থাকা শ’ শ’ বোতল ওষুধ আইসক্রিমের কার্টুনে প্যাকিং করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দিলীপ পাল ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, পিত্তথলিতে পাথর, প্যারালাইসিস, বাতের ব্যথা, হাঁপানি, একশিরা, যৌন দুর্বলতা, আলসার, ব্যথা, স্বপ্নদোষ, বন্ধ্যা নারীদের সন্তান হওয়াসহ জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করছে। সেই সাথে ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়া দিচ্ছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে দিলীপ পাল মাটির হাড়ি পাতিল বিক্রি করেন। সেই সাথে বিছালীও বিক্রি করেন তিনি। কয়েক বছর আগে থেকে দিলীপ পাল মাটির হাড়ি ও বিছালীর পাশাপাশি কবিরাজি করতেন। এখন হঠাৎ করে চিকিৎসক সেজেছেন। প্রতিদিন তার কাছে নারী পুরুষেরা ভিড় করছেন। চিকিৎসা ও তাবিজ বাবদ সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে দিলীপ পাল হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি ছাপড়া ঘরের ভেতর বসে মাটির হাড়ি পাতিল ও বিছালী বিক্রির পাশাপাশি করছেন ডাক্তারী ও কবিরাজি। তার চারিপাশে রয়েছে আইসক্রিমের কার্টনে ভরা শ’ শ’ বোতল ওষুধ। রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের পর এসব ওষুধ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। আবার আসর বসিয়ে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে খালি গায়ে নিতাই পাল রোগীদের ঝাড়ফুঁক করছে এবং আধা লিটার বোতলে পানিপড়া দিচ্ছে।
এদিন চিকিৎসা নিতে আসা এক নারী নাম, প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দিলীপ পাল একজন প্রতারক জানা ছিলো না। তিনি আর এখানে আসবেন না। এই বিষয়ে দিলীপ পাল জানিয়েছেন, আমি ২৫ বছর ধরে মানুষের চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক করছি। হাড়ি পাতিল বিক্রেতা থেকে চিকিৎসক হলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এসবের উত্তর আপনাকে দিতে পারবোনা। ঈগলু আইসক্রিমের কার্টনে ওষুধ ভর্তির বিষয়ে তিনি জানান, এসব রাজেন্দ্র কোম্পানির ওষুধ। কোম্পানির লেবেল ও নিজস্ব কার্টন নেই কেনো প্রশ্নে জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বাপ্পি পাল আইসক্রিমের কার্টনে করে আমার কাছে ওষুধ পাঠাই। আমি সেগুলো রোগীদের কাছে সরবরাহ করি। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বিক্রি করছেন কিভাবে জানতে চাইলে দিলীপ পাল আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। যশোর ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল ইসলাম জানান, কোন কোম্পানি আইসক্রিমের কার্টুনে করে ওষুধ সরবরাহ করতে পারবেন না। হাতি পাতিল বিক্রেতা ড্রাগ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। ফলে তার লাইসেন্স নেই এটা নিশ্চিত।
দিলীপ পালের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, হাড়ি পাতিল বিক্রেতা চিকিৎসক সাজার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিম্নমানের ওষুধ ও পানি পড়া আর ঝাড়ফুঁক দিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতানোর জন্য ফাঁদ পেতে বসেছেন দিলীপ পাল। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ না বুঝে তার কাছে গিয়ে প্রতারিথ হচ্ছেন। দিলীপ পালের ব্যাপারে শুনলাম। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে