ট্রাম্পের কারণে যাননি, বাইডেন জেতায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মমতা

গত চার বছরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যারের কাছে আমেরিকায় যাওয়ার একাধিক আমন্ত্রণ এসেছে। কিন্তু, ট্রাম্পের শাসনে যাবেন না বলে এতদিন তিনি সমস্ত মার্কিন আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। এবার বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি আমেরিকা সফরে যাবেন বলে মমতার কার্যালয় ‘নবান্ন’ সূত্রে জানা গেছে।

গত চার বছরে মমতা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ আনতে যুক্তরাজ্যে গেছেন, মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভ্যাটিকানে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমেরিকার প্রতিটি আমন্ত্রণই তিনি সবিনয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সূত্র জানাচ্ছে, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জিতলে প্রথম বছরেই আমেরিকা যাবেন মমতা। কারণ, এতিদিন ট্রাম্পের শাসনাধীন আমেরিকায় পা দিতে চাননি তিনি। তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, এই আমন্ত্রণগুলি এসেছিল প্রধাণত বিজনেস ফোরাম এবং সিটিজেনস গ্রুপ থেকে। কেন ট্রাম্পের আমেরিকায় মমতা যাননি এবং বাইডেনের শাসনে যাবেন? পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে গত চল্লিশ বছর ধরে খুব কাছ থেকে দেখেছেন প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র। তিনি জানিয়েছেন, ‘ভারতীয়দের ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের নীতি বা বলা যায় অভিবাসন নীতি মমতা মানতে পারেননি। তাছাড়া ট্রাম্পের উদ্বাস্তু নীতিরও তিনি ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। মেক্সিকোয় দেয়াল তুলে দেয়ার মতো কথা তিনি বরদাস্ত করতে পারেননি। তাই ক্ষোভ ছিল।’

দিল্লিতে প্রায় ৩৫ বছর ধরে সাংবাদিকতা করেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্প বহুত্ববাদে বিশ্বাস করেন না, তিনি অভিবাসীদের আটকাতে চেয়েছেন, মুসলিমদের ক্ষেত্রে তার নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ফলে মমতার পক্ষে ট্রাম্পের নীতি মানা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া ট্রাম্প ও মোদি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই মমতা এটাও দেখাতে চেয়েছেন, ট্রাম্প ও মোদির রাজনীতি এক। সেটা তিনি মানেন না। সে জন্যই আমেরিকায় যাননি মমতা।’

অর্থাৎ, এ ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের ভোট-যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছেন ট্রাম্প ও বাইডেন। ঢুকে যাচ্ছে, ট্রাম্পের নীতি নিয়ে তৃণমূলনেত্রীর মনোভাব এবং তা এখন সামনে নিয়ে আসা এবং বাইডেনকে সমর্থন করা। এটা ঘটনা যে, পেনসিলভানিয়ায় বাইডেনের জয়ের খবর আসার পর কালক্ষেপ না করে মমতা তাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছিলেন। ভারতের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন বাইডেনকে। এই সবের পিছনেও কি নিছক সৌজন্য ও বাইডেনের ঘোষিত নীতির প্রতি সমর্থন জানানো, না কি, এর পিছনেও রয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে বাড়তি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা ও সংখ্যালঘুদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দেয়া? বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভবত দুইটি তাগিদই কাজ করেছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে।