মৌলভীবাজার পৌর-সমাজকর্মী একই অফিসে ২৭ বছর

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ সরকারি চাকুরি করছেন দাপটের সঙ্গে। পদবী তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি পৌরসমাজকর্মী। কর্মস্থাল মৌলভীবাজার শহর সমাজসেবা কার্যালয়। চাকুরি জীবণে বদলী নামক শব্দটির সঙ্গে তার পরিচয় হয়ে উঠেনি। নাম তার
শ্রীচরন দাস ডাক নাম প্রকাশ দাস। প্রায় ২৬/২৭ বছর ধরে একই কর্মস্থালে আছেন
বহাল তবিয়তে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে একই অফিসে চাকুরি করার সুবাধে সুবিধা বঞ্চিত গরীবের টাকা লুটপাট করে হয়েছেন কোটিপতি। আড়াই হাজার টাকা
বেতনে স্কেলে চাকুরি হওয়া এই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি এখন সিলেট শহরের
বাঘবাড়ি এলাকায় সুরম্য অট্টালিকার মালিক। কিনেছেন দামি গাড়িও। দশম সংসদ
নির্বাচনের পর দুর্নীতির দায়ে একবার কক্সবাজারে স্ট্যান্ড রিলিজ হলেও সেখানে যোগদান করার আগেই বদলীর আদেশ বাতিল করে বহাল তবিয়তে আছেন স্বপদে মৌলভীবাজার শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে একই অফিসে কর্মরত থাকায় অসাধু কিছু লোককে দিয়ে করেছেন সিন্ডিকেট। সুবিধা বঞ্চিত গরীব-অসহায় মানুষের বয়স্কভাতা,বিধবাভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকার কমিশন হাতিয়ে নিয়েছেন। বয়স্ক ভাতা ও বিধাব ভাতা ভূগিরা নতুন কার্ড তৈরি, প্রতিস্থাপন এবং
নবায়ন করতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে একাউন্টে জমে থাকা অর্থের সিংহভাগ
তাকে না দিলে তিনি কার্ড প্রতিস্থাপন ও নবায়ন করতে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিলম্ব
করেন। কেউ যদি তাকে জমে থাকা টাকার ভাগ দিতে অস্বিকার করলে তার ভাগ্যে এসব
কার্ডেও সুবিধা ঝুটে না। আর যারা তাকে কমিশন দিতে রাজিহয় তাদের কার্ড ইস্যূ
করে টাকা উত্তোলনের জন্য কার্ডধারীর সঙ্গে ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলন করার পরপর তার
চাহিত অংশ ভাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগিরা। কে কত টাকা তাকে দিবে
তার রফা করে নেন কার্ড ইস্যূ হওয়ার পূর্বে অফিসের বাইরে। অর্থ কেলেংকারির দায়ে
অভিযুক্ত এই তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া রূপকথার গল্পের মত।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হিসেবে আড়াই হাজার টাকা বেতন
স্কেলে চাকরি নেওয়ার পর থেকে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একই জায়গায়
দীর্ঘ দিন চাকুরি করার সুবাধে অবৈধ পথে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। তিনি
সিলেট শহরের বাঘবাড়ি এলাকায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন চার
তলা বিশিষ্ট বাড়ি। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শ্রীচরন ওরফে প্রকাশ দাস বলেন, শুধু
আমি নয় আমার অফিসারও সাসপেনশনে ছিলেন। সিলেট শহরের বাঘবাড়ি এলাকায়
বাসা‘র কথা স্বীকার করে তিনি বলেন হাউজ বিল্ডিং ফাইনেন্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ
নিয়ে বাসা তৈরি করেছেন। তবে সিলেট শহরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাসার জমি কেনার
এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন এমন প্রশ্নের জবাব দেননি । তৃতীয় শ্রেণীর
কর্মচারি হয়ে সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণের খবর লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে তার
টাকার উৎস নিয়ে মানুষের মুখে মুখে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।
এসব দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পর এই প্রতিবেদককে তার
অফিসে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন।
ছবি সংযুক্ত।
মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার, ০১৭১৫-২৭৫৭৭০, তারিখ ঃ
০৪ নভেম্বর‘২০