নাটোর প্রতিনিধি
ইউনুস আলী। বয়স ৮১ বছর। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ১৯৭১ সালে ৭নং সেক্টরে অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস আলী। স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য জেনারেল এমএজি ওসমানীর স্বাক্ষর করা সনদপত্রও তিনি পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন মিজোরাম ক্যা¤েপর ইনচার্জ আব্দুল জলিল গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে পেয়েছিলেন কর্ণেল এম,এ তাহের স্বাক্ষরিত সনদ।
তবে এক দশক আগে তার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি হারানোর পর বন্ধ হয়ে গেছে সম্মানি ভাতাটুকুও। এরপর থেকেই লড়াই করে যাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য। এর মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইউনুস আলীর কাছে মোটা টাকা উৎকোচ চেয়েছেন কিন্তু ইউনুস আলীর সাফ জবাব জীবনবাজী রেখে দেশ স্বাধীন করেছি। টাকা দিয়ে তালিকায় নাম তোলার জন্য। সরেজরিনে দেখা যায়, ইউনুস আলী বয়সের ভারে অনেকটাই নুইয়ে পড়েছেন। ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি আদায়ে এক অফিস থেকে অন্য অফিসে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন। তবুও মিলছে না সাফল্য, পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। ইতিমধ্য ছয়বার গিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে। দেখা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সাথে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকার করার চেষ্টাও করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে পাকিস্তানিদের কবল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু বুক ফেটে এখন কান্না আসে যখন দেখি একই সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সহযোদ্ধারা আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান-স্বীকৃতি পাচ্ছে। সেই সাথে যারা জীবনে যুদ্ধই দেখেনি তারাও পাচ্ছে। অথচ আমি এ সম্মান থেকে বঞ্চিত।
তিনি বলেন, নাটোরের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক এমপি প্রয়াত সাইফুল ইসলামকে নিয়ে অনেকবার ঢাকায় গিয়েছি, ২০১৪ সালে গেজেটেড হওয়ার জন্য আবেদনও করেছিলাম, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ফাইলেই আটকে রয়েছে, কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তিনি বলেন, আমি স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছি। তবে কয়েক বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেয়া হয় এবং আমার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়।
ছেলে ইখতিয়ার উদ্দীন বলেন, আমার বাবা রণাঙ্গনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আমার বাবার একটাই আবেদন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার স্বীকৃতি দেয়া হোক। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে চান।
এ বিষয়ে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আলমামুন জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি ও সম্মানী বা এই সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে সর্বোপরি এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় এ আবেদন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে।
নলডাঙ্গা উপজেলা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল করিম শুকচান বলেন, ইউনুস আলী একজন
মুক্তিযোদ্ধা। আর এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সকলেই জানেন যে তিনি আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ স¤পাদক আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে ভারতের মিজোরাম পুর ক্যা¤েপ ট্রেনিং নেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ লড়াই করেছিলেন।
১৯৭১ সালে অস্ত্র হাতে বীরত্বের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ইউনুস আলী। তবে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে আজও তিনি যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। জীবদ্দশায় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি পাবেন বলে প্রত্যাশা নাজমুল করিম শুকচানের।