নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মেদপুরে রোজিনা খাতুন (৩২) নামে এক বিউটিশিয়ানকে পার্লারের দরজা আটকিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে তালাকপ্রাপ্ত স্বামীর প্রথম স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন।কেটে দেয়া হয়েছে ওই নারীর মাথার চুল। অভিযোগ উঠেছে , পুলিশ প্রভাবশালী আসামীদের পক্ষ নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ না নিয়ে নিজেরাই মনগড়া অভিযোগ লিখে নির্যাতিত নারীর স্বাক্ষর নিয়ে দায়িত্ব সেরেছে । গত ৮ সেপ্টেম্বর বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মেদপুর শওকত প্লাজায় অবস্থিত রোজী বিউটি পার্লারে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত নির্যাতিতা নিজেই বাদী হয়ে বড়াইগ্রাম থানায় ঘটনার দিনই অভিযোগ করলেও গত ১৮ দিনেই পুলিশ অভিযোগটি রেকর্ডই করেনি । আপরাধীদের আটক করা তো দূরের কথা ।
নাটোর সদও উপজেলার চৌরি গ্রামের আশরাফুল ইসলাম কাজলের কন্যা নির্যাতনের শিকার ওই বিউটিশিয়ান নারী নির্যাতনের ক্ষত আর মানসিক যন্ত্রণার বিবরণ দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি শওকত প্লাজায় অবস্থিত রোজী বিউটি পার্লার বন্ধ করার জন্য গোছগাছ করছিলেন । তখন হঠাৎ করে সেখানে উপস্থিত হোন তালাকপ্রাপ্ত স্বামী বনপাড়া বাজারের আল আমিন হোটেলের মালিক আলমগীর হোসেন আলমের স্ত্রী পান্না খাতুন ,ছোট ভাই ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী হীরা বেগমসহ সাবেক শ্বশুরবাড়ির কয়েক সদস্য। তারা বিউটি পার্লারের দরজা বন্ধ করে বেধড়ক মারপিট করে এবং তার মাথার চুল কেটে দেয় । কিছুক্ষণ পর টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে পার্লারের সামনের ফেলে ৫-৬ জন মিলে তার ওপর নির্যাতন চালায় । একপর্যায়ে তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে দেয় নির্যাতনকারীরা। পরে এলাকার লোকজন তাকে উদ্ধার করে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় । ঘটনার দিনই নির্যাতিত নারী তালাকপ্রাপÍ স্বামী আলমগীর হোসেন আলম, স্ত্রী পান্না খাতুন সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করতে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত এক পুলিশ অফিসার আলমগীর এবং ফারুককে বাদ দিয়ে দায়সারা একটি অভিযোগ লিখে রোজিনার স্বাক্ষর নেয় । কিন্তু অঞ্জাত কারণে ১৮ দিনেই অভিযোগটি মামলা আকারে গ্রহণ করা হয়নি ।
নির্যাতনের শিকার এই নারী অভিযোগ করেন, বনপাড়া বাজারে বিউটি পার্লার থাকাকালে হোটেল ব্যবসায়ী আলমের সাথে সর্ম্পক হয় । তারা গত বছরের নভেম্বরে দুজন নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেছেন। আর তাদের এই বিয়ে আলমের পরিবার মেনে নিতে না পারায় চারমাস আগে আলম তাকে তালাক দেয় । তালাকের পরে তিনি বনপাড়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে আহম্মেদপুর বাসষ্ট্যান্ডে পার্লার চালু করেন । তালাকের পর থেকে তাদের কোন যোগাযোগ নেই । তার ওপর চালানো বর্বর নির্যাতনে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন এই নির্যাতিত নারী ।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আহম্মেদপুর গ্রামের ইয়াকুব বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ শোরগোল শুনে বাইরে এসে দেখি, রোজিনীকে তালাকপ্রাপ্ত স্বামীর প্রথম স্ত্রী পান্না ,ছোট ভাই ফারুক এবং তার স্ত্রী হীরাসহ ৫-৬ জন মিলে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে আনছে। রোজিনার মাথার চুল কেটে এবং বেদম মারধর করে গহণা খুলে নিচ্ছে । তালাকপ্রাপ্ত স্বামী আলম জানান, ঘটনার সত্যাতা স্বীকার করে বলেন ।রোজিনাকে মারপিট এবং চুলকাটা ঠিক হয়নি ।ঘটনার পর থেকে আমার স্ত্রী বাসায় আসেনি । রোজিনা মেয়েটা বড় অসহায় । আমি বিষয়টি পারিবারিক ভাবে নি¯পত্তির চেষ্টা করছি।বড়াইগ্রাম থানার ওসি জানান,অভিযোগ পেয়েছি। পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। তদন্তে সত্যাতা পেলে মামলা গ্রহণ করা হবে।
বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনর্চাজ মোঃ তহিদুল ইসলাম জানান, ৪ মাস আগে রোজিনার সাথে আলমগীরের ছাড়াছাড়ি হয় । পরে পূণরায় তাদের মধ্যে স¤পর্ক স্থাপন হলে আলমগীরের প্রথম স্ত্রীসহ কয়েকজন মহিলা গিয়ে রোজিনাকে মারপিট করে চুল কেটে দেয় । বড়াইগ্রাম থানায় এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দাখিল করে । অভিযোগটির তদন্ত চলছে ।এখনো মামলা রেকর্ড হয়নি । মামলা রেকর্ড হলে আসামীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা যাবে । তখন অপরাধ অনুযায়ী ধারা বসানো যাবে ।
নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মালেক শেখ জানান, একজন নারীকে প্রকাশ্যে এমন মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নির্যাতিতাকে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়াস্থানীয়রা জানান,আলম একজন দেহ ব্যবসায়ী ।নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকার আল-আমিন আবাসিক হোটেলে যৌন ব্যবসা পরিচালনা করার অভিযোগে হোটেল মালিক বনপাড়ার ডা. ওহেদুল ইসলামের ছেলে আলমকে যৌনকর্মীসহ বেশ কয়েকবার আটক করেছে পুলিশ!